একটি ‘চমৎকার’ সংবাদশিরোনাম : বিএনপি’র উৎকণ্ঠা ॥ বন্দি খালেদার চারপাশে ‘বিস্ফোরকের ডিপো’। কারও কারও কাছে চমৎকার ঠেকতেই পারে। তবে আমাদের কাছে নয়। আমরা খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা পরিপূর্ণভাবে নিশ্চিত হোক, সদাসর্বদা এই প্রত্যাশাই করি। এ দেশের সকল নাগরিকের জানের নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক, সকল মানুষেরই কাম্য। এই নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনও আপোষ নয়, কারও সঙ্গেই। যদিও আমরা জানি আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা সবচেয়ে জরুরি। যেহেতু অতীতে অন্তত বার চল্লিশেক প্রাণনাশের অভিপ্রায়ে আক্রমণ হয়েছে তাঁর উপর এবং স্বয়ং খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাবস্থায়, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ভয়াবহতা জাতি ভুলে যায়নি এবং ইতোমধ্যে কেউ খালেদা জিয়াকে একটি ফুলের টুকাও দেয়নি।
যেখানে বিস্ফোরক থাকে সেখানে বিস্ফোরণের আশঙ্কা থাকেই। রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টার অগ্নিকা-ের দুর্ঘটনা তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, “… বেগম খালেদা জিয়াকে যে পরিত্যক্ত কারাগারে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে তার চারপাশে রাসায়নিক ‘বিস্ফোরকের ডিপো’।” তিনি আরও বলেন, “একটি কেমিকেল বিস্ফোরকবেষ্টিত ভয়ংকর বারুদের ডিপোর মাঝখানে আতঙ্কজনক পরিবেশে দেশনেত্রীকে এক বছর বন্দি করে রাখা হয়েছে।” রিজভী মহোদয়ের দাবির প্রতিসম্মান প্রদর্শনের খাতিরে চুড়িহাট্টাকে বারুদবেষ্টিত স্থান না হয় ধরেই নিলাম এবং জানি সেখানে কেবল খালেদা জিয়া থাকেন না, তার সঙ্গে হাজার হাজার সাধারণ মানুষও থাকেন এবং আমরা রিজভী মহোদয়ের মতো কেবল খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত নই, তার সঙ্গে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বিগ্ন এবং আমাদের চিন্তাটা কেবল কেমিকেল বিস্ফোরক নিয়ে আবর্তিত নয় বরং রাজনীতির ‘কেমিকেল বিস্ফোরকবেষ্টিত ভয়ংকর বারুদের ডিপো’ করে রাখা দেশটাকে নিয়ে বেশি দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত ও ভীষণ বিপন্নবোধে আক্রান্ত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটাকে রাজনীতিক বিস্ফোরক বারুদের ডিপো থেকে সরাতে দুর্নীতি, মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শূন্যসহনশীলতা ঘোষণা করেছেন। যেহেতু রাজনীতিকে এ দেশের বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ধারক-বাহকরা এমন এক পর্যায়ে নিয়ে গেছেন যে, বিশেষ বিবেচনায় বলা যায় যে, বাংলাদেশটাকেই একধরনের ধ্বংসাত্মক বিস্ফোরণের উপর বসিয়ে রাখা হয়েছে এবং এখানে বঙ্গবন্ধু ও চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করা হয়েছে, শেখ হাসিনাকে আক্রমণ করা হয়েছে। রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন যে-দেশে রাষ্ট্রস্থপতিকে হত্যা করে, হত্যার বিচার করা হবে না বলে আইন করে, জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটায়Ñ সেখানে সাধারণ মানুষ যে কারাগরে বন্দির মতোই থাকবেন তাতে কোনও সন্দেহ নেই। আমরা চাই না পুরো দেশটাকেই একটা বারুদবেষ্টিত কারাগার করে রাখা হোক। এই কারাগার ভাঙ্গার সংগ্রাম করতে হচ্ছে শেখ হাসিনাকে। আমরা শেখ হাসিনার সঙ্গে আছি।
নিরাপত্তার প্রশ্নে আমরা খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার সঙ্গে জনসাধারণের নিরাপত্তা নিয়েও ভাবিত। অতীতে এই দেশের দুষ্টরাজনীতি দশকের পর দশক ধরে জনগণ ও জাতির নিরাপত্তাকে বিঘিœত করেছে। আমরা চাই না এই দেশটা চুড়িহাট্টার মতো ধ্বংসাত্মক কোনও ‘রাজনীতিক বিস্ফোরণে’র শিকার হোক। খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার সঙ্গে দেশের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কথাও ভাবতে হবে এবং রাষ্ট্রীয় সকল কাজ কিংবা রাজনীতির সকল প্রয়াসকে অবশ্যই সর্বক্ষেত্রে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার নিয়ামক হয়ে উঠতে হবে।