মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জেলা ম্যাজেস্ট্রেসি অধিশাখার যুগ্মসচিব ও সুনামগঞ্জের সাবেক জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম সুনামগঞ্জ সফরে এসেছিলেন। তিনি গত রবিবার সুনামগঞ্জ জেলা খেলাঘরের অস্থায়ী কার্যালয়ে বসন্ত আড্ডায় বসেছিলেন। সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেছেন, “শিশুরা জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ। তাদের সুষ্ঠু বিকাশ ও উন্নয়নেই দেশের সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হবে এবং আনন্দময় শিক্ষার মাধ্যমেই শিশুর যথাযথ বিকাশ সম্ভব।” অতিসংক্ষিপ্ত ও অতীব তাৎপর্যময় এই বক্তব্যটুকু ব্যতীত এই বিদগ্ধ কর্মকর্তার বক্তব্য সম্পর্কে সংবাদ বিবরণী থেকে এর বেশি কীছু আহরণ করা যায় না। কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই ধারণা হয় যে, তার বক্তব্য এতো সংক্ষিপ্ত ছিল না বরং বিস্তৃত ছিল। আলাপচারিতায় শিশুদের ‘আনন্দময় শিক্ষার’ বিষয়টি উঠে এসেছে। সাধারণ মানুষের এ সম্পর্কে ধারণা এই যে, বর্তমান বাংলাদেশে যাঁরা রাষ্ট্র পরিচালনা করেন ও পরিচালনার কাজে নিয়োজিত আছেন, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে। বলতে খারাপ শোনায় তবু বলতে হয়, আত্মশ্রী বৃদ্ধিতে যতোটা মনোনিবেশিত থাকেন, তার শতাংশের একাংশও তাঁরা দেশের ভবিষ্যৎ চিন্তায় নিমগ্ন থাকেন না বা সে অনুপাতে কাজ করেন না। শিশুরা দেশের ভবিষ্যৎ। বাংলাদেশে শিশুদের কাঁধে বইয়ের বোঝা বাড়তে তাঁরা ব্যস্ত থাকেন। কারণ শিশুর কাঁধে বইয়ের বোঝা যতো ভারি হয় তাতেই বই বিক্রির মুনাফা বাড়ে। বই বাড়নো হয় মেধা বাড়নোর জন্য নয় মুনাফা বাড়ানোর জন্য। বইয়ের বোঝা যারা বাড়ায় শিশুর আনন্দময় শিক্ষার বিষয়ে তাঁদের কোনও মাথা ব্যথা নেই। কিন্তু এই অবস্থা কিছুতেই চলতে দেয়া যাবে না।
শিশুর শিক্ষাকে আনন্দময় করে তোলার বিষয়ে অনেকদিন ধরে বহুমুখী আলোচনা অব্যাহত থাকলেও এ বিষয়ে কী অগ্রগতি হয়েছে তা ¯পষ্ট নয়। কারও কারও মতে, শিশুকে বারবার পরীক্ষার মুখোমুখি করা হলে তার আনন্দময় শৈশব আনন্দহীন হয়ে যায়। যারা এমনটি বলেন তারা নিজেদের শৈশবের সঙ্গে এ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের তুলনা করার চেষ্টা করেন। এ ধরনের তুলনা কতটা যৌক্তিক তা ভেবে দেখা দরকার। কারণ কয়েক যুগ আগের বাস্তবতা আর বর্তমান বাস্তবতা এক নয়। আগামী দিনগুলোতে কী ধরনের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে, তা এখনই বলা মুশকিল হলেও আজকের প্রতিটি শিশুকে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মানসিকভাবে তৈরি থাকার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এটা যেন শুধু তাত্ত্বিক আলোচনায় সীমিত না থাকে সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।
বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের বিভিন্ন দিক সহজ ভাষায় প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন। যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে টিকে থাকাটা যে আনন্দের, এ বিষয়টি প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের সামনে বিশদভাবে তুলে ধরা প্রয়োজন। আমরা মনে করি, শিশুর শিক্ষাকে আনন্দময় করে তোলার জন্য ব্যাপক গবেষণা প্রয়োজন। শিশুদের মনোজাগতিক বৈশিষ্ট্যের প্রকৃত খবর না নিয়ে কেবল তথ্যবহুল রচনা দিয়ে শিশুদের পাঠক্রম সাজালে শিক্ষার প্রতি তাদের অনীহা তৈরি হতে পারে। এ অনীহা প্রকট আকার ধারণ করলে তা শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে, এ বিষয়েও ব্যাপক গবেষণা হওয়া দরকার। আনন্দময় পরিবেশে শিশুকে কী করে জ্ঞানের বিচিত্র জগতের বার্তা পৌঁছে দেয়া যায়, এটাই হওয়া উচিত শিশু শিক্ষার অন্যতম একটি দিক।