সুনামগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক বলেছেন, ‘পণ্যমেলার নামে আয়োজন করা হলেও এটি প্রতারণা মেলা বলা যায়। পণ্যমেলার কিছুই নেই এতে। বাজারের পণ্য বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।’ এবং এলাকাবাসী মেলাটি দ্রুত বন্ধের জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন। অভিযোগ উঠেছে, শহরের ষোলঘর মাঠে জেলা ক্রীড়াসংস্থার আয়োজনে এ মাসের প্রথম সপ্তাহে শুরু হওয়া সুনামগঞ্জ শিল্প ও পণ্যমেলায় সার্কাস ও লটারির আয়োজনের জন্য জেলা প্রশাসনের অনুমোদন নেওয়া হয়নি এবং পণ্যমেলায় সার্কাস পার্টির আয়োজনের কোনও সরকারি নিয়ম নেই। অভিযোগ আরও আছে, সার্কাস দেখতে গিয়ে সার্কাসে পারফরমারদের শিষ্টাচারবহির্ভূত অঙ্গভঙ্গি শিশুসমবিব্যহারে অভিভাবকগণ বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছেন। একটি শিল্প ও পণ্যমেলার এমন মান আশা করা যায় না, কীছুতেই।
ব্রিটিশ শাসনামলে দেশের ও সমাজের বিপন্ন অবস্থা দেখে একবার কবি কাজী নজরুল ইসলাম বড়বেশি বিব্রতবোধ করেছিলেন, বোধ করি বলেছিলেন যে, তিনি দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছেন এবং যাহা মুখে আসে তাই বলেন। শিল্প ও পণ্যমেলার অবস্থা দেখে আমাদেরও অবস্থা কাজী নজরুল ইসলামের মতো হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা অল্প শোকে কাতর হইনি বরং অধিক শোকে পাথর হয়েছি এবং মুখে আসল কথা বলতে পারছি না অবস্থায় পড়েছি। প্রয়োজনের অনুরোধে তারপরেও কীছু বলতেই হচ্ছে। না বলে পারছি না। কাকে দোষবো? বরুণদারা সমাজতন্ত্রের কথা বলেছিলেন। আমরা পুঁজিতন্ত্রের অনুসারীরা তাঁদের কথা শুনিনি। সমাজতন্ত্রের ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিকে ধর্মদ্রোহিতা বলে এই তন্ত্রটিকে পাত্তা দেইনি। পুঁজিতন্ত্র ধর্মদ্রোহী নয়, কিন্তু এটি দেখছি কেবল ধর্মকেই নাশ করে না, মানুষের মনুষ্যত্বকেও বিনষ্ট করে। পুঁজির আরও টাকা চাই। টাকার জন্য পণ্য চাই। সে পণ্য করে সব কীছুকেই। সার্কাস, লাটরি, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি তো কোন ছার। বিশ্বে কোনও কোনও রাষ্ট্র আছে যে-রাষ্ট্র ইচ্ছে করলে পৃথিবীকে শতাধিকবার সম্পূর্ণ ধ্বংস করার আণবিক শক্তিধর। পুঁজিবাদ এমন ব্যবস্থা করে রেখেছে যে, বিশ্বে এমন ধ্বনি ব্যক্তির উদ্ভব হতেই পারে যিনি হয় তো বাংলাদেশের সকল ধনীর চেয়ে বেশি সম্পদের অধিকারী হতে পারবেন। যিনি ধনী, যিনি বেশি বেশি টাকার মালিক, তিনি টাকা হাতিয়ে নেবেনই। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, টাকায় টাকা আনে।
গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদশিরোনাম ছিল, ‘পণ্যমেলার নামে সার্কাস, লটারি ॥ হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা’। টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্যেই। এটাই পুঁজিবাদী নিয়ম। এই নিয়মের কোনও ব্যত্যয় পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় নেই, হতে পারে না। সুতরাং পণ্যমেলার নামে সার্কাস, লটারি হবেই। হাতিয়ে নেয়া হবেই লাখ লাখ টাকা। টাকা হাতানোর এই খেলার অর্থব্যবস্থাকে টিকিয়ে রেখে, সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থাকে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অধীনে ছেড়ে দিয়ে, টাকা হাতিয়ে না নেওয়ার বাসনা পোষণ করা স্ববিরোধিতা। মনে রাখতে হবে, এসব আর্থনীতিক অপকর্ম ঠেকাতে প্রচলিত আর্থব্যবস্থাটিকে বদলে দিতে হবে এবং সেজন্য অবশ্যই প্রস্তুত থাকতে হবে। অন্যথায় এসব অত্যাচার সইতে হবেই।