জনশ্রুতি আছে, সাংবাদিকতা একটি মহৎ পেশা। তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কথাটিতে যৎসামান্য মিথ্যা আছে বলেও মনে হয় না। কিন্তু বিপরীতে এই মহৎ পেশাটির যে অপব্যবহার নেই তেমন নয়। এর অপব্যবহারও আছে এবং অপব্যবহার সংঘটিত হচ্ছে যত্রতত্র যখন তখন। আবার সংবাদপত্রেই অর্থাৎ সাংবাদিকতার অপব্যবহারের খবর আমরা পাই সাংবাদিকতা থেকেই। আমাদের দেশে প্রায়ই সে-অপব্যবহারের ঘটনা ঘটে থাকে। এবং আমরা যারা সাংবাদিকতা করি তারা যারপরনাই লজ্জিত হই।
বিশেষ অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে সাম্প্রতিক সাংবাদিকতার তাৎপর্যকে অনুধাবন করলে বলতেই হয় যে, সাংবাদিকতার ‘মহৎ পেশা’র অভিধাটি আসলে বদলে গিয়ে ‘ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক’ একটি পেশা হয়ে পড়েছে। এখানে সততা ও সাহসিকতার প্রয়োজন এখন বড় বেশি। যাঁর সাহস নেই, যিনি জেনেশুনে সত্যোচ্চারণের ঝুঁকি নিতে জানেন না, তেমন সাংবাদিক জনগণের বিবেচনায় ‘সাংঘাতিক’ হয়ে উঠেন, তিনি সাংবাদিক হিসেবে খবর ছাপলে কিংবা না ছাপলে দু’দিক থেকেই মানুষের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠেন। এইসব সাংবাদিককে আমরা সাংবাদিক বলি না, তারা সাংবাদিকতাকে অনৈতিক পদ্ধতিতে পণ্য করে তুলেছেন। তাদের সাংবাদিকতাকে ধিক্কার জানাই। এইসবের বিপরীতে আর এক শ্রেণির সাংবাদিক আছেন যারা সত্য প্রকাশে তৎপর থাকেন, সাংবাদিকতাকে সত্য প্রকাশের হাতিয়ার করে তোলেন। এরকম সাংবাদিক কারও বন্ধু হতে পারেন না কখনও। তাঁরা প্রায়ই অসাধু, দুষ্ট, দুর্বৃত্ত লোকজনের হামলা, মামলা, অত্যাচার, হুমকি-ধামকির শিকার হয়ে থাকেন। কারণ সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতা সব সময়ই দুর্নীতিবাজ-দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে অভিঘাত হিসেবে আবির্ভূত হয়। তাঁরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাই সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকদের উপর আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে, বিভিন্নভাবে সাংবাদিকদের উপর আক্রমণ শানায় আর সে-আক্রমণ অব্যাহত রাখে। প্রায়ই সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয়, দেশের আনাচে-কানাচে সাংবাদিকরা দুর্বৃত্তদের দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছেন কিংবা হুমকি-ধামকির শিকার হচ্ছেন, কেউ কেউ অত্যাচার সইতে না পেরে প্রাণভয়ে এলাকা ছাড়া হচ্ছেন।
গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল, ‘সাংবাদিক রাজ্জাককে প্রাণনাশের হুমকি’। তাঁর অপরাধ তিনি স্থানীয় এক বখাটের বিরুদ্ধে পত্রিকায় সংবাদ করেছিলেন। বখাটে একটি স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিল। জেল হাজত থেকে ফিরে এসে সে এখন সংবাদিকের পেছনে লেগেছে। আমরা সংবাদ পেয়েছি, শাল্লার সুনামকণ্ঠের প্রতিনিধি জয়ন্ত সেন বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার কারণে এলাকা ছাড়া হয়েছেন। তাঁর সংবাদ কোনও কোনও স্বার্থন্বেষীর স্বার্থ ক্ষুণœ করেছে বলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে এতোটাই আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে যে, এলাকায় তাঁর নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে।
আমরা কেবল বলতে চাই, প্রশাসনের এ ব্যাপারে কি কোনও করণীয় নেই? যদি থাকে তবে একটা কীছু করুন। এই অসুস্থ চর্চা থেকে মানুষকে ফিরিয়ে আনুন। আমরা বলতে বাধ্য যে, দেশের ভেতরে সাংবাদিকতা এমন অসহায়ত্বের বেষ্টনীতে বন্দি হয়ে পড়লে সত্যিকার অর্থে সমাজের সুস্থতা ফিরে আসবে না, কোনও দিন এবং প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নের অভিযাত্রা ব্যাহত হবে। আর যেসব সাংবাদিক নিজেকে সাংবাদিক বলে পরিচয় দিয়ে সাংবাদিকতার অপব্যবহার করেন তাদেরকেও ছাড় দেওয়া উচিত নয়।