‘বাঁধের কাজে সীমাহীন অনিয়ম’ এটি একটি সংবাদ শিরোনাম। গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের প্রথম পাতায় ছাপা হয়েছে। বাঁধের কাজে এমনি অনিয়ম তথা দুর্নীতি আরও হচ্ছে। মাত্রাটা এতো বেশি যে, বলতে হয় মাত্রাটা ছাড়িয়ে গেছে এবং সেটা অনিয়ম-দুর্নীতির দিক থেকে সকল সেরা অনিয়ম-দুর্নীতিকে ছাড়িয়ে সেরা হয়ে উঠেছে এবং সেটা হয়েছে যখন সরকারের পক্ষ থেকে সর্বান্তকরণে দুর্নীতিকে সর্বাবস্থায় শূন্যসহনশীলতা প্রদর্শনের দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করা হয়েছে, কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত, সবখানে। কিন্তু সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে ফসলরক্ষাবাঁধ নির্মাণের কাজে দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার ও দুর্নীতির তা-বতার তীব্রতা সরকার ঘোষিত ‘দুর্নীতিকে শূন্যসহনশীলতা প্রদর্শনের নীতি’কে কার্যত অকার্যকর করে দিয়ে সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করেছে এবং প্রকারান্তরে দুর্নীতিবাজরাই সরকারের থেকে শক্তিধর এই ধারণাকে জনসমক্ষে সগৌবরে প্রতিষ্ঠিত করছে।
অবস্থাটা এমন যে, চোর জনসমক্ষে ঘুরে বেড়াচ্ছে কিন্তু চোরকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নীতিনির্ধারকরা প্রতিবিধৎসাপ্রবণ হচ্ছেন বটে, সে প্রতিকারপ্রবণতা বক্তৃতা, আদেশ, নির্দেশ পর্যন্ত সীমিত থাকছে, কার্যত কাজে পরিণত হচ্ছে না। সংবাদসংগ্রহে যাওয়া এক পত্রিকা প্রতিনিধিকে লোকেরা বলেছেন যে, তাঁরা অনিয়মের প্রতিবাদ করেছেন, কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না। বরং উল্টো তাঁদেরকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে পিআইসি’র পক্ষ থেকে। অর্থাৎ সরকারের আদেশ-নির্দেশ কিংবা প্রণীতনীতি প্রতিপালিত হচ্ছে না।
বাঁধের কাজে অনিয়ম কিংবা দুর্নীতি যাই বলি, এই বিষয়ে সুনামকণ্ঠের প্রথম পাতাতেই আরও তিনটি সংবাদ শিরোনাম আছে। বিভাগীয় কমিশনারের বরাত দিয়ে একটি শিরোনাম করা হয়েছে, ‘২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধের কাজ সম্পন্ন করুন’। অন্য দু’টির শিরোনাম যথাক্রমে ‘পুরনো বাঁধের মাটি দিয়েই নতুন করে বাঁধ নির্মাণ’ (কইয়ের তেলে কই ভাজা) এবং ‘দিরাই-শাল্লায় বাঁধের কাজ পরিদর্শন করলেন পুলিশ সুপার’। সরকারি প্রতিনিধিরা পরিদর্শন করছেন এবং পরিদর্শনের কাজের ভেতরেই পরিদর্শকের আড়লে চলছে সেই সনাতন নীতিকথার গালগল্প, চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী। হাওরাঞ্চলে বাঁধনির্মাণ নিয়ে যা কীছু হচ্ছে, তার অতিসাম্প্রতিক প্রেক্ষিত বিবেচনায় নিয়ে যে-কেউ বলতেই পারেন, বাঁধনির্মাণের ক্ষেত্রে প্রকাশ্য দিবালোকে অনিয়ম-দুর্নীতি চলছেই, প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে আমাদের বেশি কীছু বলার নেই, কেবল একটা কথাই বলার আছে, আর সেটি হলো : হাওররক্ষাবাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে দুর্নীতিকে শূন্যসহনশীলতা দেখানোর আড়ালে দুর্নীতিকে পৃষ্ঠপোষকতা করার রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।