বাল্যবিয়ে দীর্ঘদিনের এক সামাজিক অভিশাপ। বাল্যবিয়ে নানাভাবে একজন নারী, তার পরিবার ও সমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। নারীর সম্ভাবনাকে বিকশিত হতে দেয় না বাল্যবিয়ে। বাল্যবিয়ে রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু কোথাও কোথাও গোপনে এখনও বাল্যবিয়ে চলছে। গত বুধবার সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার ৯নং ওয়ার্ডের জলিলপুর গ্রামের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী মোসা. ছায়েদা আক্তার বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা পেয়েছেন। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তৎপরতায় এ বাল্যবিয়ে রোধ সম্ভব হয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দৈনিক সুনামকণ্ঠে প্রকাশিত হয়েছে। শুধু বাল্যবিয়ে রোধই নয়, এই বিয়ের সাথে জড়িত কনের পিতা ও বরসহ ৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে। প্রশাসনের এমন পদক্ষেপকে আমরা সাধুবাদ জানাই।
একবিংশ শতাব্দীতে এসে যেখানে বাল্যবিয়ে শূন্যের কোঠায় নেমে আসা ছিল স্বাভাবিক, সেখানে এর বিপরীতটা ঘটছে। বাল্যবিয়ের হার শূন্য শতাংশে নামবে কি বরং গোপনে চলছে বাল্যবিয়ে। আমরা মনে করি, বাল্যবিয়ে শুধু নিজেই একটি সমস্যা নয় এটি আরও অনেক সামাজিক সমস্যা তৈরি করে। অকাল মাতৃমৃত্যু ও শিশু অপুষ্টিসহ অনেক সামাজিক সমস্যার মূলে রয়েছে এই বাল্যবিয়ে।
বাংলাদেশের আইনানুযায়ী ২১ বছরের কম বয়সী কোনো পুরুষ কিংবা ১৮ বছরের কম বয়সী কোনো নারী বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হলে তা বাল্যবিয়ে হিসেবে গণ্য। কিন্তু অনেকেই এসবের তোয়াক্কা করছেন না। নিজের ছেলে-মেয়েকে অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে দিচ্ছেন। যা কখনো কাম্য নয়।
আমরা মনে করি, বাল্যবিয়ে রোধে শুধু প্রশাসনের ওপর দায় বর্তালে চলবে না; সামাজিকভাবেও একে প্রতিরোধ করা প্রয়োজন। বাল্যবিয়ে কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করতে হলে সবার আগে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানোর মূল দায়িত্বটা নেয়া উচিত আমাদের সকলকে। সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে বাল্যবিয়ে রোধে কাজ করতে হবে। প্রগতিশীল বিভিন্ন ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও সংগঠনকে এই সামাজিক আন্দোলনের নেতৃত্বে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা চাই, বাংলাদেশ বাল্যবিয়ের অভিশাপ থেকে মুক্ত থাকুক।