‘বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ নয়। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নে ভরপুর। এটি সম্ভব হয়েছে আওয়ামী লীগের সরকারের নেতৃত্বের কারণে। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করছে।’ এরকম কথাবার্তা ইদানিং প্রায়ই ক্ষমতাসীন রাজনীতিক মহলের কোনও না কোন উচ্চপর্যায়ের কারও না কারও মুখে শোনা যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কথাবার্তায়ও উপরোক্ত বার্তা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত এবং দেশের বর্তমান রাজনীতিক ও আর্থনীতিক অবস্থায় এমনটাই স্বাভাবিক, তাতে কারও দ্বিমত নেই। এইরূপ প্রচারের দ্বারা সারাদেশে আওয়ামী লীগের পক্ষে একটি ইতিবাচক রাজনীতিক পরিপ্রেক্ষিত তৈরি হচ্ছে বটে এবং এই ইতিবাচক পরিপ্রেক্ষিতটির প্রয়োজন আছে। কারণ দেশ এখন একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। যেহেতু অদূর অতীতে দেশের অনিবার্য উন্নয়নের সম্ভাবনাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে থামিয়ে দিয়ে দেশকে জঙ্গিবাদী ব্যর্থরাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্র কার্যত কার্যকর করা হচ্ছিল। দেশ পাঁচ পাঁচ বার বিশ্বপরিসরে দুর্নীতিতে সেরা পদক পেয়েছিল। দেশ আবার সেই ক্রান্তিকালের চক্করে পড়ে পাকিস্তানের মতো একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হোক সেটা কারও কাম্য হতে পারে না। দেশের মানুষের একান্ত কাম্য, উন্নয়নের জোয়ারটা অব্যাহত থাকুক এবং এই উন্নয়ন ‘জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি’তে পর্যবশিত হোক।
কথা হলো এই ‘জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি’ কীভাবে সম্ভব? পত্রিকায় লেখা হয়েছে, ‘সরকার জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করছে’। কাজ হচ্ছে ঠিকই। সরকারকে সেজন্য ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, কাজটা বলা যতোটা সহজ করা ততোটা সহজ নয়, বরং খুব খুব কঠিন। জানা কথা, উন্নয়নের কাজকে জনগণের মুক্তির সিঁড়ি করে তোলতে না পারলে সরকারের এই ঘোষণা ব্যর্থতায় পর্যবশিত হবে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে উন্নয়ন কম হয়নি, কিন্তু সেখানে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি আসেনি, বরং জনগণের মধ্যে ধনবৈষম্য বেড়েছে বহুগুণে। সরকার পরিচালনায় কেন্দ্র হতে পরিধি পর্যন্ত সবখানে অর্থাৎ তৃণমূলের প্রতিটি বিন্দুতে জনগণের মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। প্রচলিত রাজনীতিক পৃষ্ঠপোষকতার নীতি কার্যকর করে দেশে রাজনীতিক ও আর্থনীতিক কাজ পরিচালনা করলে কতিপয়ের ‘আঙ্গুল ফুলে তালগাছ’ হওয়া সম্ভব হলেও সামগ্রিকভাবে জনগণের মুক্তি সম্ভব নয়। আসল কথা, রাজনীতিকদের মধ্যে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির সংস্কৃতির চর্চাকে আত্মস্থ করতে হবে। অন্যথায় ‘জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি’র এই রাজনীতিক বুলি জনপ্রিয়তা পেলেও কার্যত কথার কথাই থেকে যাবে, কাজে পরিণত হবে না এবং সরকারের সকল প্রতিশ্রুতি প্রকারান্তরে অদূর ভবিষ্যতে প্রতারণার চোরাবালি হয়ে আবির্ভূত হবে, জনগণের সামনে। তখন কীছুই করার থাকবে না।