গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের প্রথম পাতায় ছাপা হয়েছে সংবাদ প্রতিবেদনটি। শিরোনাম করা হয়েছে, “ধর্মপাশার কাইলানী হাওর ॥ প্রভাবশালীদের বাধায় বাঁধের কাজ বন্ধ”। এইটুকু পাঠ করার পর ভেতরে কী বিতংবিবরণ ইত্যাদি বিবৃত হয়েছে তা জানার আর আগ্রহ থাকে না। কেন জানি এক প্রকার উষ্মা মিশ্রিত মনোযোগ এই ‘প্রভাবশালী’ শব্দটার প্রতি নিবদ্ধ হয়ে পড়ে কিংবা বলা যায় আবদ্ধ হয়ে পড়ে লেপ্টে থাকে, মাকড়সার জালে পতঙ্গ পড়ার মতো। অন্যদিকে আর প্রবাহিত হতে চায় না। মনটা প্রভাবশালীদের ঐতিহাসিকতা নিয়ে ভাবতে শুরু করে। এই প্রভাবশালীরা আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান, জ্ঞানী ও গুণী সক্রেটিকে হ্যামলক পান করিয়ে হত্যা করেছিল, ২০১৯ বছর আগে যীশুখ্রিস্টকে হত্যা করেছিল। এই প্রভাবশালীরাই উপমহাদেশের ১৯৪৭ সালে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাগুলোতে একাধিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না করে একটি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করেছিল, বাঙালি জনগোষ্ঠীর মাঝে উর্দুভাষা চাপিয়ে দিয়ে বাংলাভাষাকে বিকৃত-বিনষ্ট করা তথা বাঙালি জতিসত্তাকে হত্যার ষড়যন্ত্রে আত্মনিয়োগ করেছিল। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুহত্যা, ২০০৪-এর গ্রেনেড হামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র আমদানি, বাংলাভাই এইসবের মূলেও সেই একই রহস্যজনক প্রভাবশালীরা। এইভাবে ইতিহাসের বিভিন্ন বাঁক পর্যটনে মন ব্যাপৃত হয়ে পড়ে। সত্যিকার অর্থে চিন্তাটা আর ‘প্রভাবশালীদের বাধায় বাঁধের কাজ বন্ধ’ এই প্রসঙ্গে আবর্তিত হয় না।
আজকের পত্রিকার একটি শিরোনাম, “হারকিউলিসের রহস্য উদ্ঘাটন করা হবে -স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী”। এই হারকিউলিসরা ধর্ষকদের ধরে ধরে নাকি মেরে ফেলছে। আমাদের স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্যই ধর্ষকদের পক্ষে নন। তিনি তাদের বিচার করে শাস্তি দিতে চান। বিচারবহির্ভূত হত্যা তাঁর কাম্য নয়, কাম্য হতে পারে না। কিন্তু কীছু প্রভাবশালীর পক্ষপাতিত্বের কারণে আমাদের সমাজে ধর্ষকদের শাস্তি নিশ্চিত হয় না বরং তারা রক্ষা পায় এবং রক্ষা পেয়ে ধর্ষিতা ও ধর্ষিতার অভিভাবকদের হুমকির কারণ হয়ে আবির্ভূত হয়। যে-ধর্মপাশায় প্রভাবশালীদের জন্য বাঁধের কাজ বন্ধ থাকে সেই প্রভাবশালীদের কারণেই গতবছর একজন কিশোরী কিশোরের ছদ্মবেশে রিকসা চালিয়ে তার উপার্জন-অক্ষম বাবামা-ভাইবোনকে পালন করার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। প্রভাবশালীরা তাকে ঘরে বন্দি হয়ে থাকতে বাধ্য করে। এবার আবার এরাই বাঁধ দিতে বাধা দিচ্ছে। সব কথার শেষ কথা, এই প্রভাবশালীদের হাত থেকে সমাজ কবে রক্ষা পাবে? আর কতো এই প্রভাবশালীরা সমাজকে জ্বালাতন করবে?
সমাজের সকল প্রগতিশীল কাজে কর্মে এরা এদের নোংরা প্রতিক্রিয়াশীল হাত প্রসারিত করে। এরা স্বস্বার্থে জাতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ইতিহাস পর্যন্ত পাল্টে দিতে কসুর করে না। মানুষ এই নোংরা প্রভাবশালীদের ততোধিক নোংরা কার্যক্রম আর দেখতে চায় না। এইসব প্রভাবশালীদের সমাজবিরোধী ও সমাজের জন্য অশুভ কার্যক্রম বন্ধ করা হোক।