দুর্নীতি নিয়ে ইতোমধ্যে অনেকে অনেক কথা বলেছেন, পত্রপত্রিকায় কিংবা যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে অনেক লেখালেখি করেছেন এবং অনেক অনেক প্রতিবিধিৎসার প্রকরণ ও পরামর্শ ইতোমধ্যে জাতির জ্ঞানভা-ারে জমা পড়েছে। কিন্তু দুর্নীতিদমন দিল্লিদূরস্ত। প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্টজনদের সকাশে প্রতিনিয়ত দুর্নীতিকে শূন্যসহনশীলতা দেখানোর নির্দেশ জ্ঞাপন করছেন।
দেশের সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, শিক্ষা ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্র, এককথায় গোটা উৎপাদনসম্পর্কটাই, দুর্নীতিগ্রস্ত। খারাপ শুনালেও বলতে হয়, বিদ্যমান উৎপাদন ব্যবস্থাটিই দুর্নীতি উৎপাদনের মূল কারকানা। এই উৎপাদনসম্পর্কটিকে পরিশুদ্ধ করতে হবে। পরিশুদ্ধ করার জন্য উৎপাদন ব্যবস্থাটিকে অবশ্যই আমূল বদলে দিতে হবে, যাতে করে উৎপাদন ব্যবস্থার মধ্যে দুর্নীতি উৎপন্ন না হয়, দুর্নীতির উৎপাদন আসকারা না পায়, কোনও প্রকারেই।
এই তো গতকালের সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদপ্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, “বুলচান্দ উচ্চবিদ্যালয় প্রধান শিক্ষকের ‘অনিয়মের’ প্রতিবাদে মানববন্ধন” এবং এর পাশেই ছাপা হয়েছে “পলাশ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মন্নানকে সাময়িক বহিষ্কার”। দু’টি সংবাদই প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা নিয়ে। একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ৭/৮ বিষয়ে অকৃতকার্য ছাত্রকে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেওয়া ও অন্যজনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ। বলা বাহুল্য, মানুষ গড়ার মেস্তরি যদি দুর্নীতিগ্রস্ত হয় তবে তো রাষ্ট্রের সকল নাগরিকই দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কার প্রাদুর্ভাব ঘটে। এবং আমাদের দেশ-রাষ্ট্রের ভেতরে আসলে তাই হয়েছে। আমাদের দেশটা প্রকৃতপ্রস্তাবে একটি দুর্নীতি উৎপাদনের উৎকৃষ্ট কারখানায় পর্যবশিত হয়ে পড়ছে।
এদিকে, দুর্নীতিকে শূন্যসহনশীলতা দেখানোর বিষয়টি জানা হয়ে গেছে সকলেরই। কিন্তু দেখাই যাচ্ছে তেমন সাড়া মিলছে না। বিপরীতে পত্রিকায় শিরোনাম ছাপা হচ্ছে, “অনিয়ম হলে উপজেলায় ভোট বন্ধ, আপস নয় : সিইসি”, “বাঁধের কাজে মন্থরগতি ॥ জামালগঞ্জে হচ্ছে অনিয়ম, চলছে সিন্ডিকেট বাণিজ্য”, “জলমহাল শুকিয়ে মৎস্য আহরণে বাধা দেয়ায় কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা”। অর্থাৎ অনিয়ম-দুর্নীতি বহালতবিয়তেই আছে। বরং দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী জাগরণকে দমনোর জন্য মামলা হচ্ছে। এমতাবস্থায় বলতেই হয় যে, সমাজব্যবস্থাটিই দাঁড়িয়ে আছে দুর্নীতির ভিতের উপর। করার কীছু নেই কারও। বাঁচতে বাঁচাতে, মরতে মারতে, করতে না করতে ইত্যাদি সব কীছুতেই দুর্নীতি একমাত্র নিয়ামক। অনেক ক্ষেত্রে রাজনীতির নিয়ামকও দুর্নীতি। সুতরাং আমাদের কর্তব্য, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত সোচ্চার থাকা। আমরা দুর্নীতিকে না বলবো। আমরা চাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্যসহনশীলতার চর্চাটি দেশের প্রতিটি প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে তৃণমূলের একজন সাধারণ মানুষ পর্যন্ত বিস্তৃত লাভ করুক, দুর্নীতি নির্মূলের পথ প্রশস্ত হোক। আপনিও যোগদিন দুর্নীতি নির্মূলের যুদ্ধে।