গতকালের সুনামকণ্ঠের শীর্ষশিরোনাম ছিল, ‘জেলার দশ উপজেলায় ভোট ১০ মার্চ’। এই শিরোনামের নিচে লেখা হয়েছে, ‘আসন্ন পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জের ১০টি উপজেলাসহ দেশের মোট ৮৭ উপজেলায় ভোট হবে ১০ মার্চ।’ ব্যস এইটুকুু বিবরণ অধিগত হলেই আপাতত চলবে। এতে একটি অতীব তাৎপর্যমণ্ডিত ও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পাওয়া গেলো। সারাদেশে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন হচ্ছে। বাংলাদেশে জনবান্ধব শাসন ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠাকে নিশ্চিত করতে চাইলে সর্বাগ্রে স্থানীয় সরকারের শাসন ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, এর কোনও বিকল্প নেই। আর তা করতে হলে বাংলাদেশে বিদ্যমান আর্থসামাজিক ব্যবস্থাকে আমূল পাল্টে দিতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, অবকাঠামো নির্মাণের বরাদ্দ বিলিবণ্টন ও তদারকির কাজ থেকে সংসদকে ফিরে যেতে হবে আইন প্রণয়নের কাজে। অবকাঠামো নির্মাণের কাজটা করবে স্থানীয় সরকার এবং এই স্থানীয় সরকারের কাজের উপর অপর কোনও প্রশাসন ও সংসদীয় কোনও খবরদারী-কর্তৃত্ব থাকবে না। স্থানীয় সরকার হবে তার নিজস্ব আয়ের উপর নির্ভরশীল, প্রয়োজনে কেন্দ্র অর্থসহায়তা করবে মাত্র, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করবে না। এইরূপ একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থার ভেতরেই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে এবং দুর্নীতি যাতে না হয় তার সর্বপ্রকার ব্যবস্থা করতে হবে।
এমন একটি স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশের বর্তমান আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় অত্যন্ত প্রত্যাশিত। দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে পা রেখেছে। এই সময়ে উন্নয়নকে অধিকতর অর্থবহ ও টেকসই করতে হলে একটি শক্তিশালী ও জবাবদিহিমূলক স্থানীয় সরকার চাই। কিন্তু বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মনে হচ্ছে, সেটা করতে গেলে সংসদ ও জেলা, উপজেলা প্রশাসনের বিরোধিতাকে অতিক্রম করে যেতে হবে। কারণ স্থানীয় সরকার স্থানীয় সরকারের সংজ্ঞানুসারে পুরোমাত্রায় প্রতিষ্ঠিত হলে সংসদ, জেলা উপজেলার বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে স্থানীয় সরকারের কার্যক্রম সাংঘর্ষিক প্রতিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা আছে। তারপরও প্রত্যাশা রইলো বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী, স্বনির্ভর ও জবাবদিহিমূলক স্থানীয় সরকার গড়ে উঠুক। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর আদর্শিক অনুসারীরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন যদি বাস্তবায়ন করতে চান তবে অবশ্যই তাঁদেরকে যে-করেই হোক প্রকৃত স্থানীয় সরকারের শাসনব্যবস্থা বাংলাদেশে কায়েম করতে হবে।