চুরি প্রতি মুহূর্তে হচ্ছে। জগতে চুরিই জীবনের চালিকাশক্তি, কেউ যদি এমনটি দাবি করেন, তবে বোধ করি তাঁকে দোষারোপ করার যথোপযুক্ত কোনও যুক্তি খুঁেজ পাওয়া যাবে না। বলতে গেলে বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত মুক্তবাজার অর্থনীতি চৌর্যবৃত্তির উপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠিত। জার্মান এক জ্ঞানী সমাজবিজ্ঞানীর, বোধ করি তাঁর নাম ব্রিসো, চুরি সম্পর্কে ধারণা থেকে বলা যায় যে, চুরিই ধনের উৎস। এই কথা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। কিন্তু কথাটার কীছুটা যথার্থতা মিলে, যখন মসজিদের দানবাক্স চুরি হয়ে যায়। দানবাক্স মানে টাকায় ভর্তি বাক্স। তাই চোর ধন সঞ্চয়ের সহজ উপায় করেছে দানবাক্স চুরিকেই। গতকাল দৈনিক সুনামকণ্ঠে এমনি একটা চমকপ্রদ (না কি নিতান্ত স্বাভাবিক, চমকে উঠার মতো নয়) সংবাদ বেরিয়েছে।
কোথায় কোন মসজিদে চুরি সংঘটিত হয়েছে সে কথার আর দরকার নেই। আসল কথা চুরি হয়েছে। মানুষ চুরি করতে বেরিয়ে ধর্মকেও তোয়াক্কা করছে না, ছাড় দিচ্ছে না। ধর্মস্থানে যখন তস্করের হস্ত প্রসারিত তখন প্রমাণিত হয় যে, ধর্মের অনুশাসনে চুরির প্রতিবন্ধকতা বাস্তবে অকার্যকর একটি বিষয় এবং প্রকারান্তরে স্বাভাবিক বোধোদয় ঘটে যে, চুরি থেকে ধর্মই বাদ পড়ছে না, জাগতিক নীতিনৈতিকতা তো কোন দূরস্থান। এমতাবস্থায় এমন সিদ্ধান্তে যে-কেউ উপনীত হতেই পারেন, হওয়াই স্বাভাবিক ও যুক্তিযুক্ত যে, হাওররক্ষাবাঁধও চুরি থেকে বাদ পড়বে না এবং বিপরীতে বাদ পড়বে এমনটি আশা করা বাতুলতা মাত্র। ব্যাপারটা এমন হয়ে পড়েছে যে, আশায় বসতি করে হতাশ হওয়াই বাংলাদেশের মানুষের একমাত্র নিয়তি। অর্থাৎ প্রতিনিয়ত হতাশার আঘাতে আশাহত হওয়ার নির্বন্ধনই বাংলাদেশের লোকায়তিক জীবনের বাস্তবতা। তবে আশার কথা, হাওরবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাওরাঞ্চলের উন্নয়নের উপর সংশ্লিষ্টদেরকে জোর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। জেলা প্রশাসক ঘোষণা করেছেন, ‘বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি করলে ছাড় নয়’। এর ফলে আমরা আমজনতা আরও আশ্বস্ত হয়েছি এবং সেই সঙ্গে যখন জানতে পেরেছি, সুনামগঞ্জকে পর্যটনভিত্তিক জেলা হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা আছে সরকারের, তখন আশাভরসার পরিসরটা বেড়েছে, বৈ কি এবং সেই সঙ্গে বেড়েছে অন্যরকম অশুভ আশঙ্কাও। যে দেশে মসজিদের দানবাক্স চুরি হয়ে যায়, সে-দেশে হাওররক্ষাবাঁধের কিংবা পর্যটনশিল্প প্রকল্পের টাকা মেরে দিয়ে মুফতে বড়লোক হওয়ার ধান্না লোকে ছাড়বে না জানি। তবু শেষ ভরসা : আশায় বসতি। আশা নেই, তো জীবনে কোনও স্বপ্ন নেই। স্বপ্ন নেই তো জীবনটাই একটা আস্ত অনর্থ। জীবনকে আমরা অনর্থ করে দিতে চাই না। আমরা সুনামগঞ্জবাসী সুনামগঞ্জকে পর্যটনশিল্পের সেরাস্থান করে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখবোই। এই স্বপ্নে বাস্তবায়নে আমরা সুনামগঞ্জবাসী এক সঙ্গে সংশপ্তক হতে দ্বিধা করবো না।