গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের সংবাদপ্রতিবেদনগুলোর সংবাদ বিবরণীটুকু পড়ার কোনও দরকার নেই, শিরোনাম-উপশিরোনামগুলোই কোনও একজন বোদ্ধা পাঠককে কোনও একটি বিশেষ বার্তা পরিবেশনে যথেষ্ট সক্ষম। প্রশ্ন হলো সে-বিশেষ বার্তাটি কী? বার্তাটির নিহিতার্থ কিংবা মর্মার্থই বা কী? একজন সাংসদ বলেছেন, ‘নৌপথে অতিষ্ঠকারী পুলিশ চাই না’। প্রকারান্তরে স্বীকার করলেন, যে-পুলিশ চাঁদাবাজি বন্ধ করার অভিপ্রায় থেকে তিনি নিজোদ্যোগে নিয়ে এসেছিলেন সে পুলিশ চাঁদাবাজি বন্ধের কাজ করে না নিজেরাই চাঁদাবজি করে বেড়ায়। অর্থাৎ বিষয়টা দাঁড়ালো চাঁদাবাজি বন্ধ নয়, চাঁদাবাজি করার জন্যেই পুলিশ বেতন পায়। এই প্রক্রিয়াকে লোকে বলে, ‘বেড়ায় ধান খায়’। আরও বেশ কটা চমকপ্রদ শিরোনাম হলো, ‘শিশুদের ইয়াবা খাইয়ে পতিতাবৃত্তি : এসআই কারাগারে’, ‘সরকারি কর্মকর্তাদের যথাযথভাবে কাজ করার নির্দেশ পরিকল্পনামন্ত্রীর’, ‘মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর বাড়তি নজরদারিতে রয়েছেন’, ‘কর্মক্ষেত্রে ডাক্তারকে পাওয়া না গেলে ওএসডি করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর’। অন্য একটি পত্রিকা শিরোনাম করেছে, ‘যে কোনো মূল্যে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে’ এবং এই প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন দুদক চেয়ারম্যান। এই ক’টা শিরোনাম আর কীছু না পারুক অন্তত একজন পাঠককে এই বার্তা পৌঁছে দিয়েছে যে, বাংলাদেশে যিনি যেখানে কর্মরত আছেন তিনি সেখানে যথাযথ কর্তব্য পালন করছেন না এবং কাজ না করেই বেতন খেয়ে চলেছেন। এমন একটি দেশের সার্বিক ও সুষম উন্নয়ন কীছুতেই আশা করা যায় না। এখানে অসম অর্থাৎ একমাত্র বৈষম্যমূলক উন্নয়নই আশা করা যায় এবং যে-উন্নয়নের চালিকাশক্তি দুর্নীতি। দুর্নীতির মাধ্যমে এক শ্রেণির মানুষ বিপুল উন্নয়নের ফল ভোগ করবে অন্যরা দুর্দশার দুষ্টচক্রের পাকে পড়ে কেবল আবর্তিত হবে অনন্তকাল।
এই ক’টি শিরোনাম আর একটি বার্তা মানুষকে পৌঁছে দেয়, সেটি হলো : প্রকৃতার্থেই (আজকাল মনে হয় একেবারে আক্ষরিক অর্থেই) একজন জনদরদী প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ‘দুর্দশার দুষ্টচক্রের পাকে পড়ে কেবল আবর্তিত’ জীবনের কথা হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছেন ও তৎপ্রেক্ষিতে তাঁর তরফে তৎপর হয়েছেন। তাই তাঁর সরকারের লোকেদের তরফ থেকে উপরিউক্ত শিরোনামগুলোর দ্বারা মানুষকে মুক্তির বারতা পরিবেশন শুরু হয়েছে। আমরা বার্তা শ্রবণে তুষ্ট হতে চাই না, প্রতিটি প্রতিশ্রুতির কার্যত বাস্তবায়ন চাই। কায়মনোবাক্যে কামনা করি প্রধানমন্ত্রী সফল হোন। তাঁর অনুসারি কর্মী, সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা সফল হোন। সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন পূর্ণ হোক। বাংলাদেশের জয় হোক।