ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটেছে। সাধারণত এমন ঘটনা ঘটে না। একজন কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকে পিটিয়েছেন একজন পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপক। কারণ ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করায় কর্তব্যরত পুলিশ তাঁর চলার পথে প্রতিরোধ তোলেছিলেন। পেটানো শুরু করার আগে অবশ্য দু’জনের মধ্যে একচোট বাকবিত-া হয়েছিল। অন্য একটি পত্রিকায় অন্য একটি সংবাদপ্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ‘বিভিন্ন সময় একা পেয়ে প্রলোভন দেখিয়ে ওই ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দিত সাজন। কুপ্রস্তাবে সাড়া না পেয়ে ভিকটিমের প্রতি সাজন ক্ষেপে উঠে।’ এরপর একদিন সুযোগমতো পেয়ে জোরপূর্বক ‘… ভিকটিমের শ্লীলতাহানি ঘটায়।’ দু’টি ঘটনা দু’রকম তো অবশ্যই, পরিপ্রেক্ষিতও সম্পূর্ণ ভিন্ন, কিন্তু ঘটনা দু’টিতে ক্ষেপে যাওয়ার ঘটনাটা হুবহু একরকম। দু’ক্ষেত্রেই ক্ষেপে যাওয়ার কোনও ন্যায়সঙ্গত কারণ নেই, কোনও নৈতিক ভিত্তি নেই, কোনও আদর্শিক যুক্তি নেই। অর্থাৎ সামাজিক জীব হিসেবে এই ব্যাংক ব্যবস্থাপক ও বখাটের মধ্যে চরিত্রগত কোনও ফারাক নেই, দুজনেই ন্যায়-অন্যায়ের ধার ধারেন না অপরাধজগতের অন্ধকারের জীবের মতো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকার দেশকে দুর্নীতিমুক্ত, সুখী, সমৃদ্ধ সোনার দেশ করে গড়ে তোলতে বদ্ধপরিকর। দেশবাসী তাঁর ও তাঁর সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। এই ঘোষণার জন্য অভিনন্দন। তাঁরা অন্তত এবার ক্ষমতায় এসে দেশোন্নয়নের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়ার মতো বলে বসেননি ‘রাজনীতিকে প্রব্লেম্যাটিক করে তোলবো।’ কিন্তু কথা হলো, এই প্রব্লেম্যাটিক করে তোলার রাজনীতির ফাঁকে দেশের আনাচে কানাচে, দপ্তরে দপ্তরে, রাজনীতিক দলের অভ্যন্তরে উপরোক্ত সংবাদপ্রতিবেদনের নায়কের মতো দুষ্টচরিত্রের ব্যবস্থাপক ও লম্পট লোকেরা অনুপ্রবিষ্ট হয়ে আছে, এদেরকে বহালতবিয়তে রেখে দেশের সুখ, সমৃদ্ধি ও উন্নতি অর্জন সম্ভব নয়। যেমন সম্ভব নয় চন্দ্রসোনার থাল হাওরের বোরো ফসলরক্ষা বাঁধ সময়মতো ও সুষ্ঠুভাবে নির্মাণ করা, যতক্ষণ পর্যন্ত না পিআইসিদের ইচ্ছাকৃত গাফিলতি ও কাজের ধীরগতি থামানো গেছে। তারপরেও আছে রাজনীতির ভেতরের রাজনীতি, যাকে বলে রাজনীতিক পৃষ্ঠপোষকতা। এই রাজনীতিক পৃষ্ঠপোষকতাই হলো রাজনীতিক দলের ভেতরের মূল খুঁটি। যদিও আমরা আশ্বস্ত হয়েছি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের প্রতিশ্রুতি পেয়ে। গতকালের সুনামকণ্ঠে প্রকাশ, তিনি বলেছেন, ‘বাঁধের কাজে দুর্নীতি হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাজে কোন প্রকার ফাঁকি মেনে নেয়া হবে না। … তা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ।’ সচিবকে ধন্যবাদ।
আসলে সম্প্রতি দেশের রাজনীতিতে দেশহিতৈষণার কিংবা প্রকৃতপ্রস্তাবে কথায় নয় কাজে জনস্বার্থসংশ্লিষ্টতার প্রসঙ্গটি ফিরে আসার পরিপ্রেক্ষিত কেবল তৈরি হচ্ছে। পরিস্থিতিটা অবশ্যই অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও নাজুক। ক্ষমতাসীন দলের ভেতরের দুষ্টদের, যাদেরকে বঙ্গবন্ধু ‘চাটারদল’ বলতেন, দলের ভেতরে এইসব লোকের আদর্শবিরোধী ও সমাজ-রাষ্ট্রেবিরোধী কর্মকা- অবশ্যই প্রতিরোধ করতে হবে এবং দলের বাইরে সমাজের যেখানে যে-প্রতিষ্ঠানের ভেতরে লুকিয়ে আছে দুষ্ট ব্যবস্থাপক ও বখাটের মতো সমাজবিরোধীরা তাদেকে চিহ্নিত করে প্রতিরোধ করতে হবে। অন্যথায় দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত দেশ গড়ার স্বপ্ন দিবাস্বপ্নে পর্যবশিত হবে, কীছুই করার থাকবে না। অবস্থা দাঁড়াবে যে কে সেই। প্রকারান্তরে প্রেসিডেন্ট জিয়ার প্রবর্তিত ‘প্রব্লেম্যাটিক (সমস্যাশঙ্কুল) রাজনীতি’র অবসান হবে না কোনও দিনই।