লোকে বলে, ‘সারা অঙ্গে বেথা অসুদ দিমু কোথা।’ ব্যথা অসুখের লক্ষণ, অসুখ হলেই ব্যথা হয়। দেশটার অবস্থা হয়েছে এমন। এই দেশর সর্ব অঙ্গে অসুস্থতা ছড়িয়ে আছে। এই অসুস্থতার নাম দুর্নীতি। দুর্নীতি সবখানে। দুর্নীতিতে সকলেই জড়িত, ব্যতিক্রম বাদে কেউ বাদ নেই। মনে হয় সম্পূর্ণ দেশটাই, কিংবা দেশের প্রশাসনের পুরোটাই দুর্নীতির চক্রের কুল্লায় (জলের ¯্রােতচক্রে) নিমজ্জিত।
পত্রিকায় প্রকাশ- এক সংবাদ সম্মেলনে ‘হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন’-এর নেতারা বলেছেন, ‘বাঁধের কাজের সাথে জড়িতরা লুকোচুরির আশ্রয় নিচ্ছেন। ফলে কৃষকরা তাঁদের ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।’ এই বক্তব্যের সত্যতার প্রমাণ এই যে, এবার পিআইসিতে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ২০১৭ সালের দুদকের মামলার আসামি ২০১৯ সালের পিআইসিতে সভাপতি কিংবা সদস্য হয়ে বহাল তবিয়তে আছেন। কিন্তু কী করে সে-রহস্য বোধগম্য নয়। এর নিহিতার্থ একটাই হতে পারে, আর সে-টা হলো, পিআইসিতে আগের বারের মতো দুর্নীতি করার সুযোগ এবারও চরিতার্থ করা, এর অন্য কোনও তাৎপর্য থাকতে পারে না। কিন্তু বিস্ময়ের বিষয় হলো এই চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ার পরও পিআইসি থেকে তাদের বহিষ্কার করা হচ্ছে না, বরং তাদেরকে বহাল রাখার বিভিন্ন রকমের পাঁয়তারা করা কিংবা বাহানা তৈরি করা হচ্ছে, উল্টোপাল্টা তথ্য পরিবেশন করা হচ্ছে বা যথাযথ তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে না, প্রকারান্তরে তথ্য গোপন করা হচ্ছে। এমনকি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যে-সব পিআইসি’র কাজ শুরু হয়নি সে-সব পিআইসি’র কাজ শুরু হয়েছে বলে কাগজেপত্রে তথ্য দেওয়া হয়েছে এবং এই করে সাধারণ মানুষকে ও প্রশাসনকে প্রতারিত করার দৃষ্টান্ত ইতোমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে। অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পর্যন্ত দুর্নীতির সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততাকে গোপন রাখতে পারছেন না, ক্ষেত্র বিশেষে লুকোচুরি করতে বাধ্য হচ্ছেন। হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ উঠেছে, ‘এবার বাঁধের বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা লুকোচুরি খেলছেন।’
১৯৭৫-য়ের পরবর্তী সময়ে ক্ষমতাসীনদের রাজনীতিক পৃষ্ঠপোষকতায় দুর্নীতিকে, বলতে গেলে, সর্বময় ক্ষমতায় বসানো হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনার সরকার, এবার ক্ষমতাসীন হওয়ার শুরু থেকেই এই সর্বত্র প্রতিষ্ঠিত দুর্নীতিকে শূন্যসহনশীলতা দেখাতে শুরু করেছেন। কিন্তু দুর্নীতিকে শূন্যসহনশীলতা দেখানোর সরকারি ঘোষণার অন্তরালে হাওররক্ষাবাঁধ নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক শ্রেণির প্রশাসনিক কর্মকর্তা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিতে কসুর করছেন না এবং প্রকারান্তরে বর্তমান সরকারের দুর্নীতিনির্মূলের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতী কর্মকা-ে লিপ্ত আছেন বলে প্রতিপন্ন হচ্ছে। আমরা সরকার ঘোষিত দুর্নীতিবিরোধী নীতির সমর্থক হিসেবে হাওররক্ষাবাঁধ নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ‘সরকারের দুর্নীতিবিরোধী নীতির বিরোধিতা করার প্রবণতা’ সমর্থন করি না, বরং বিরোধিতা করছি।