কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় সুনামগঞ্জে লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বসতভিটা পানিতে তলিয়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। জেলার নি¤œাঞ্চলে অনেকের ঘরের ভেতরে পানি থৈ থৈ করছে। এসব এলাকার মানুষ বিপাকে পড়েছেন। সরকারি ও সামাজিক বিভিন্ন সংগঠন, ব্যক্তি উদ্যোগে শুকনো খাবার ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ নানা উপকরণ বিতরণ করা হচ্ছে। তবে সরবরাহকৃত ত্রাণ পর্যাপ্ত নয় বলে দাবি করছেন অনেক পানিবন্দি মানুষ। এবং অনেক জায়গায় এখনো পর্যন্ত ত্রাণ পৌঁছেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। পাহাড়ি ঢল ও অতি বর্ষণের কারণে রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন দরিদ্র জনগোষ্ঠী। বিশেষ করে হাওরাঞ্চলের প্রান্তিক চাষীরা পড়েছেন বিপাকে। বন্যায় আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে প্রশাসনকে পর্যাপ্ত ত্রাণের পাশাপাশি বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে দিতে এখন থেকেই পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে বিশিষ্টজনদের অভিমত। সাধারণত বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন হাওরাঞ্চলের বিশাল দরিদ্র জনগোষ্ঠী। গেলো বোরো মৌসুমে পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিপাতে হাওরের বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়েছে। ফসল হারানোর হাহাকার শেষ হতে না হতেই ফের বন্যায় আক্রান্ত হয়ে জেলার প্রান্তিক চাষী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী এখন দিশেহারা। একমাত্র কৃষির উপরই নির্ভরশীল হাওরাঞ্চলে সহায়-সম্বলহারা মানুষের পাশে দাঁড়ানো সকলের নৈতিক দায়িত্ব বলে আমরা মনে করি। এই দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় একদিকে যেমন ত্রাণ, বিশুদ্ধপানি ও প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রের সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। অপরদিকে কৃষকের জন্য বীজ সরবরাহ করা না গেলে তার সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। রাজনৈতিক টানাপোড়েন, আস্থার সংকট যাই হোক এমন দুর্যোগে রাজনৈতিক ও সামাজিক সকল মতভেদ ভুলে বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ানো জরুরি প্রয়োজন।
গতকাল দৈনিক সুনামকণ্ঠের শীর্ষ সংবাদ শিরোনাম ছিল- “প্রচার নয়, সাহায্যের মানসিকতায় মানুষের পাশে দাঁড়ান”। জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত জরুরি সভার সংবাদে বলা হয়- ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার নি¤œাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ এখন পানিবন্দি অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। গত কিছুদিন সুরমাসহ অন্যান্য শাখা নদীগুলোতে পানি বাড়তে থাকায় জনমনে ছিল আতঙ্ক। তবে মঙ্গলবার বৃষ্টি কম হওয়াতে এবং দুপুরের দিক থেকে রোদ দেখা দেয়ায় পানির উচ্চতাও ধীরে ধীরে কমতে থাকে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার, ছাতকসহ অন্যান্য এলাকায় পানিবন্দি মানুষের মধ্যে শুকনো খাবার ও অন্যান্য ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে প্রশাসনসহ কিছু সংগঠন। আশার কথা গত দু’দিনের রোদ দেখা দেয়ায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট সংস্কারে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি ভিত্তিতে এখন থেকেই পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। সৃষ্ট বন্যার কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পর্যাপ্ত বীজ সরবরাহ করাও জরুরি প্রয়োজন। সরকারের পাশাপাশি সামাজিকভাবেও বন্যাদুর্গতদের পাশে সকলের আরো বেশি করে এগিয়ে আসা উচিত।