… এমন কি ইদানিং এমন কারও কারও মুখে এমন সব ইতিবাচক কথাবার্তা উচ্চারিত হচ্ছে অবাক না হয়ে পারা যাচ্ছে না। যে-লোকটা গত কয়েকদিন আগেও পৃষ্ঠপোষকতার রাজনীতির কল্যাণে ‘গমচোর’ জাতীয় প্রাণী ছিল সে-ও এখন ইতিবাচক কথাবার্তা বলছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে অনায়াসে সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, ১৯৭৫-য়ের জাতীয় বিপর্যয়ের পর দেশটা প্রকৃতপক্ষে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ছিল এবং হঠাৎ করেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নতুন সরকার গঠন করতে না করতেই রাজনীতির খেল নলচে পাল্টে গেছে এবং কারও কারও ভাবনায় এমন দুর্নীতিবিরোধী বাকবিস্তার ‘ভূতের মুখে রাম নামে’র উচ্চারণের চেয়েও বোধ করি বিস্ময়কর বলে প্রতিপন্ন হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে শূন্যসহনশীলতার ঘোষণা দেওয়ার পর কোনও কোনও রাজনীতিবিদদের মধ্যে কথাবার্তায় এমন ইতিবাচকতার আমেজ বিস্তার লাভ করেছে। আজকাল গণমাধ্যমে ফলাও করে এসব প্রকাশিত হচ্ছে। এমনও ঘটনা ঘটেছে যে, দেখা গেছে মাদকবাণিজ্যের চিহ্নিত মাফিয়া মাদকনির্মূলের প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে মাদকনির্মূল আভিযানে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন। দেশের সামগ্রিক রাজনীতির এই ইতিবাচক পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে জাতি আসলেই আশাবাদী হয়ে উঠেছে। জাতি স্বপ্ন দেখছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ সুশাসনে সমৃদ্ধ একটি দেশে পরিণত হবে, এখানে থাকবে না দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মাদক। কিন্তু আসল কথা হলো এই সুশাসনের তিন শত্রু এই দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মাদককে প্রতিরোধ করতে হলে এমন একটি আর্থব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা চাই, যে-আর্থব্যবস্থায় দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মাদক প্রসারবিস্তারের আনুকূল্য না পায়। একটি সম্পাদকীয় মন্তব্য এরকম, “… কোন ব্যবস্থাই আসলে খারাপ নয়, তা ঠিকাদারিই হোক কিংবা পিআইসি। আসলে এর সাথে জড়িত ব্যক্তিরাই এইসব ব্যবস্থাকে কলুষিত করার জন্য দায়ী। তাই ব্যবস্থা পাল্টানোর সাথে সাথে এর পেছনে যে মানুষগুলো থাকে তাদের চিন্তা ও স্বভাবের পরিবর্তনটা দেখা মূল। নতুবা চরমভাবে দুর্নীতিপ্রবণ এই সমাজ বাস্তবতায় শেষ পর্যন্ত দুর্নীতিমুক্ত কোন ব্যবস্থাই আর খোঁজে পাওয়া যাবে না।” অর্থাৎ যখন যে-ব্যবস্থার অধীনেই সমাজনিয়ন্ত্রণ করা হোক না কেনো নিয়ন্ত্রকদের ধাত (আসলে শ্রেণিচরিত্র) অনুসারেই সমাজের আদলটা দাঁড়িয়ে যায়। অতএব আমরা আশা করবো ক্ষমতাসীন রাজনীতিকদের মধ্যে কথাবার্তায় যেমন ইতিবাচকতার সূত্রপাত হয়েছে তেমনি কাজেকর্মেও তাঁরা ইতিবাচক হয়ে উঠবেন। তাঁরা কথায় ও কাজে এক হয়ে উঠুন এবং বাংলাদেশে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি, সাম্য, শান্তি, সুখ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হোক। যাঁরা ইতিবাচক কথাবার্তা বলছেন, আপতত তাঁদের মুখে ফুলচন্দন পড়–ক।