গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের শিরোনামগুলির মধ্যে বেশ ক’টা শিরোনাম ইতিবাচকতার ¯িœগ্ধতা পরিবেশনের তৎপরতায় ছিল কীছুটা হলেও ব্যতিক্রমী, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা সবার তরে সবার জন্য কাজ করবো।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘সুশাসন ও নিরাপত্তার প্রশ্নে কাউকে ছাড় নয়।’ পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেছেন, ‘উন্নয়ন হতে হবে মানবিক, টেকসই।’ জেলা প্রশাসক বলেছেন, ‘নতুন প্রজন্মকে আলোকিত মানুষ হতে হবে।’ রাষ্ট্র-সমাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনও একটি দেশের মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসন পর্যন্ত এরকম নীতিগত প্রত্যয় ব্যক্ত করার পর যদি কার্যত সে-নীতি প্রয়োগে কোনওরূপ ব্যত্যয় না ঘটে তবে সে-দেশটি একটি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দেশে পরিণত হবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
যখনই দেশোন্নয়নের কর্মসূচি দেশের সাধারণ মানুষের সুখ-শান্তির সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য হয়ে ওঠে, নতুন কোনও রাজনীতিক মতাদর্শ দেশের গরিব মানুষের স্বার্থসংরক্ষণের নীতি প্রণয়নের প্রয়াসে তৎপর হয়, তখনই সেটাকে ব্যর্থ করে দেওয়ার জন্য অশুভ শক্তির আবির্ভাব ঘটে এবং অনিবার্যভাবে সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত না হয়ে বরং সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশটাকে সোনার বাংলা করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। ইতিহাস সাক্ষী সুশাসনের শত্রুরা, জনকল্যাণের বিরোধীরা, স্বাধীনতার বিরোধীরা সে-সুযোগ বঙ্গবন্ধুকে দেয়নি। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার রূপকল্প বাস্তব হয়ে উঠেনি তাঁর স্বাধীন করা দেশে, বরং দেশটাই পরাধীন হয়ে পড়ে, প্রকারান্তরে দেশের মানুষ দেশের ভেতরেই নির্বাসিত হয়। দেশটাই হয়ে পড়ে দেশের মানুষের জন্য কারাগার। এই কারাগার থেকে মুক্তি চাই।
আজ মুক্তির বাণী উচ্চারিত হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিংবা জেলা প্রশাসকের মুখ থেকে। কিন্তু আসল কথা এই সব উচ্চারণের মর্মার্থ সত্যিকার অর্থে বাস্তবায়ন হবে কি? বঙ্গবন্ধু বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সমাজপ্রগতি ও সুশাসিত সমাজপ্রতিষ্ঠার শত্রুরা সে-স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে দেয়নি, দেয় না কখনও। এখন বঙ্গবন্ধুতনয়ার ক্ষমতাসীন সরকারের চতুর্থ মেয়াদে সুশাসনের প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মাদককে শূন্যসহনশীলতা দেখানোর সংকল্প ব্যক্ত করা হয়েছে। দেশের সাধারণ মানুষ এগুলোই চায়, তাদের অপাতত সমাজতন্ত্র চাই না, সুশাসন চাই দুর্নীতি চাই না, শান্তি চাই সন্ত্রাস চাই না, সুস্থতা চাই মাদকাসক্ত হয়ে অবশবিবশ অসুস্থ জীবন চাই না। কাজ চাই রোজগার চাই। সেটাই হবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্নসাধ পূরণ।
কিন্তু কতোটা সময় লাগবে, সেটা কোনও বড় কথা নয়। সব আগে সমাজে ঘাপটি মেরে বসে থাকা শত্রুদের ঠেকাতে হবে। সুশাসনের কর্মসূচির সমান্তরালে ষড়যন্ত্রকে ঠেকানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বিজয়কে সংহত করা আগে জরুরি। স্বাধীনতা লাভ করা খুব কঠিন, স্বাধীনতা রক্ষা আরও বেশি কঠিন ও কষ্টসাধ্য।