আবার নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘দেশকে এগিয়ে নিতে, সুন্দর দেশ গড়তে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন’। তিনি চান ‘একটি উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে’। ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়’-এ তিনি দীপ্ত এবং অঙ্গীকারে দৃঢ়। কিন্তু পত্রিকায় যখন সংবাদ পাঠ করি, সিলেটের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেশ কীছু শিশু নতুন বছরের উপহার বই হাতে নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারেনি। পত্রিকার বয়ানানুসারে তারা বই না পেয়ে ‘হাউমাউ করে’ কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি গেছে। তাদের অপরাধ, তারা প্রধান শিক্ষিকার নির্দেশমতো নতুন বছরে নতুন ‘স্কুল ড্রেস’ নিয়ে বিদ্যালয়ে আসতে পারেনি। তখন মনে ভাবনা হয়, এই প্রধান শিক্ষিকার কি কোনও অধিকার আছে শিশুদেরকে এইভাবে বই না দেওয়ার, যে বই সরকার তাদেরকে দিয়ে দিয়েছেন বিনে পয়সায়? সরকার কি তাঁকে এই অধিকার দিয়ে প্রধান শিক্ষিকা বানিয়ে বেতন দিয়ে থাকেন? এইরূপ প্রধান শিক্ষিকাকে শিশুদের মানুষ করে তোলার ভার দিয়ে তো মনে হয়, শেখ হাসিনার কোনও স্বপ্নসাধই পূর্ণ হবে না। প্রধানমন্ত্রীর দেশকে এগিয়ে নেওয়ার, সুন্দর দেশ গড়ার, দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করার প্রত্যয় প্রত্যয়ই থেকে যাবে, বাস্তবে রূপ লাভ করে জাতির পিতার স্বপ্ন সোনার বাংলা গড়ে উঠবে না।
বলা হচ্ছে, শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে দারিদ্রের অভিশাপমুক্ত করেছেন, তাই বলে বস্তির গরিবরা মোটা অঙ্কের বেতন পাওয়া ওই প্রধান শিক্ষিকার মতো ধনী হয়ে যাননি। এই প্রধান শিক্ষিকা হয়তো মাসে ত্রিশ হাজার টাকারও বেশি বেতন পান। কিন্তু বস্তিবাসী শ্রমিক সারাদিন খেটেখুটে যে আয় করেন তা দিয়ে হয় তো তাঁর দিন আগের বছর কয়েকের চেয়ে ভালো চলে, কিন্তু সন্তানের নতুন ‘স্কুল ড্রেস’ হয় তো সময় মতো কিনে দিতে পারেন না। আর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ‘নতুন ড্রেস’ পরে বিদ্যালয়ে যেতে না পারার অজুহাতে গরিব শ্রমিকের শিশুটিকে বই না দিয়ে ফেরত পাঠাচ্ছেন বাড়িতে। এর একটাই অর্থ হতে পারে, শেখ হাসিনার গরিব নাগরিকের সন্তানকে কমখরচে শিক্ষা বিতরণের প্রক্রিয়াটিকে ভেস্তে দিয়ে শিক্ষাটাকে ধনীদের একচেটিয়া করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছেন।
একদিকে দেশ উত্তরোত্তর এগিয়ে চলেছে, শেখ হাসিনা যখন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রাণান্ত করছেন। অন্যদিকে যাঁদেরকে মোটা বেতন দিয়ে প্রতিপালন করছেন, তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর এগিয়ে যাওয়ার গতিকে কমিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছেন, জানতে কিংবা অজান্তে, তাঁদের স্বভাবে থেকে যাওয়া প্রতিক্রিয়াশীল মানসতার বশীভূত হয়ে। যে যেখানেই থাকুন এই পশ্চাৎপদ মানসতাকে পরিহার করা এখন জাতীয় স্বার্থেই কর্তব্য।