আজ রোবার। ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮। আজ ভোট। ১৯৭১-য়ে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিকতার নাগপাশ ছিন্ন করে স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশে আজ একাদশতম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জাতির প্রত্যাশা ছিল উৎসবমুখর পরিবেশে এই নির্বাচনটি সম্পন্ন হবে। কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশিত নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন নেতিবাচক সংবাদের ভিত্তিতে সার্বিক নির্বাচনী পরিস্থিতির জটিলতা কীছুটা হলেও সে-প্রত্যাশা পূরণে অনিশ্চয়তাকে নিশ্চিত করে তোলছে। তারপরেও প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দলের রাজনীতিক বিচক্ষণতার প্রতি দেশবাসী আস্থা রেখেছেন এবং ভাবছেন তাঁদের আচরণ গণতান্ত্রিক নীতির বিচারে সঙ্গত ও সুসংহত হবে এবং অন্তত জাতীয় বিপর্যয় সৃষ্টির উৎস হয়ে উঠবে না।
বিভিন্ন মহলের সচেতন পর্যবেক্ষণ বলছে, যদি কোনও অনাকাক্সিক্ষত বিপর্যয় না ঘটে, আজকের নির্বাচন চতুর্থবারের মতো শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রীত্বকে নিশ্চিত করবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। ইতোমধ্যে ড. কামাল হোসেন বলেছেন যে, বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের নির্বাচনে মনোনয়ন দেবে জানলে তিনি ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব নিতে যেতেন না। অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই যে, রাজনীতির মধ্যে পরিস্থিতি নির্বিশেষে প্রতিনিয়ত এবং বিধ ঘটনা জটিলতার আবির্ভাব রাজনীতির অন্তর্গত দুর্বলতারই নামান্তর।
রাজনীতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতিক বিকাশের এমন নাজুক অবস্থায় ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে জনগণের রাজনীতিক ক্ষমতায়ন স্বাভাবিকভাইে সুনিশ্চিত হবার নয়। ১৯৭৫-য়ে রাষ্ট্রস্থপতিকে হত্যার মাধ্যমে গণতন্ত্রবিমুখ প্রতিক্রিয়াশীল যুদ্ধপরাধীদের পৃষ্ঠপোষণের রাজনীতি দেশে প্রতিষ্ঠা লাভ করে, রাজনীতিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাজনীতিবিদদের জন্য পরিপূর্ণভাবে জটিল ও কূটিল (জিয়া বলেতেন ‘প্রব্লেম্যাটিক’) করে তোলা হয়। এই রাজনীতিক জটিলতার প্রগাঢ় অন্ধকারের ভেতরেই শেখ মুজিবের সোনার বাংলার স্বপ্নসম্ভাবনার কবর রচনা করে মুক্তবাজার অর্থনীতির সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনকে নিশ্চিত করা হয়। আমরা আশা করি, এবারের ভোটযুদ্ধে সাধারণ মানুষের জয় হবে এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্নসম্ভাবনার সূর্যোদয় ঘটাবে। এই স্বপ্ন দেখছেন দেশবাসী।