গত ফসলী মৌসুমের আগের ফসলী মৌসুমে (১৪২৩ বঙ্গাব্দ) সুনামগঞ্জসহ বিশাল ভাটিবাংলার প্রায় সমস্ত বোরো ফসল আক্ষরিক অর্থেই তলিয়ে গিয়েছিল এবং সময়টা এমন ছিল যে, ফসল তখনও পাকতে শুরু করেনি। এই ফসলডুবি সমগ্র দেশকে হতবাক করে দিয়েছিল। ভাটিবাংলার পক্ষ থেকে হাওরাঞ্চলকে সরকারিভাবে দুর্গত এলাকা বলে ঘোষণার দাবি উঠেছিল, বিশেষ করে সুনামগঞ্জের পক্ষ থেকে সুনামগঞ্জকে দুর্গত ঘোষণার দাবিটি ছিল অত্যন্ত প্রবল এবং একজন সচিব সে দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সুনামগঞ্জের অর্ধেক মানুষ মৃত্যুবরণ করলে সুনামগঞ্জকে দুর্গত ঘোষণা করা যেতে পারে, তার আগে কীছুতেই নয়, এইরূপ অভিমত প্রকাশ করে বলে ছিলেন, সুনামগঞ্জে তো একটি ছাগলও মারা যায়নি, সুতরাং দুর্গত ঘোষণার প্রশ্নই উঠে না।
সত্যিকার অর্থেই অবস্থাটা ছিল অত্যন্ত বিপজ্জনক। ধনী কিংবা গরিব সকল কৃষকের গোলাই তখন একেবারেই শূূন্য। গোলায় ধান না থাকলে ভাটির মানুষ খাবে কি, বাঁচেবে কী করে। প্রশাসন ও জাতীয় নেতৃবৃন্দ এই বিপদ নিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন ছিলেন। তখন অবস্থা এমন যে, আসলেই দুয়েক দিনের মধ্যেই ভাটি অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ ঝড়ের গতিতে হামলে পড়বে। তাৎক্ষণিক কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে মানুষ না খেতে পেয়ে মরতে শুরু করবে। শেখ হাসিনার সরকার তখন তড়িৎগতিতে ভাটিবাংলার খদ্যনিরাপত্তার সার্বিক ব্যবস্থা করেন। ঘরে ঘরে চাল ও নগদ টাকা বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে পোঁছে দেওয়া হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে হাওরাঞ্চলের ফসলডুবির বিপর্যয়টি জরুরিভিত্তিতে সমাধানযোগ্য একটি জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয় এবং পরের বছরে হাওরাঞ্চলে ফসলরক্ষাবাঁধ নির্মাণের বরাদ্দ বাড়ানো হয় এবং এর সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনিক খবরদারি বাড়ানো হয় যাতে করে ফসলরক্ষাবাঁধ নির্মাণে কোনওরূপ দুর্নীতি হতে না পারে এবং সরকারি এই প্রয়াসের সঙ্গে বেসরকারি প্রয়াসের সম্মিলন ঘটে এবং সুনামগঞ্জে গঠিত হয় ‘হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন’ নামের অরাজনৈতিক সংগঠন।
সকল মহলের পক্ষ থেকে উপলব্ধি ঘটে যে, যথাযথ স্থানে ফসলরক্ষাবাঁধ নির্মাণ ও সময়মতো জল সরে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় স্থানে নদী ও খাল খনন ব্যতীত হাওরাঞ্চলের বোরো ফসলরক্ষার অন্য কোনও বিকল্প নেই।
গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদশিরোনাম ছিল, ‘হাওরে খালখনন কাজ শুরু হয়েছে’। সংবাদবিবরণীতে বলা হয়েছে, এ বছর জেলার হাওরের পানি নিষ্কাশনের জন্য ১১টি উপজেলায় ১১টি গুরুত্বপূর্ণ খাল খননের কাজ শুরু হয়েছে। এই খালখনন সম্পূর্ণ হলে হাওরাঞ্চল ফসলডুবির বিপদ থেকে রক্ষা পাবে। সাধারণ মানুষ তাই মনে করেন। আমরা আশা করি, সুষ্ঠুরূপে এই কাজ সম্পন্ন হবে এবং কোনওরূপ দুর্নীতি হবে না।