1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ০৯:১৮ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

ইতিহাস সত্য উন্মোচনে বড় বেশি নির্মম

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৮

সম্প্রতি একটি তাৎপর্যপূর্ণ খবর বেরিয়েছে। গত শনিবার (২২ ডিসেম্বর, ২০১৮) পাঞ্জাব সরকারেরর ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে লাহোরে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, ‘বঞ্চনার কারণেই বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে।’ একজন পাকিস্তানি নাগরিকের এই বক্তব্য নিয়ে বাংলাদেশের পত্রিকায় মন্তব্য করা হয়েছে, ‘মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ সৃষ্টির পেছনে বঞ্চনাই প্রধান কারণ ছিল বলে স্বীকার করে নিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।’ ইতিহাসের সত্য এভাবেই উন্মোচিত হয়। কেউ না কেউ সত্যকে উন্মোচিত করে ও অবনতমস্তকে স্বীকার করে নেয়। সক্রেটিসকে অন্যায় বিচারের সম্মুখিন করে হত্যা করা হয়েছিল আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে। সেই বিচারকে অন্যায় বলে সম্প্রতি খ্রিস্টধর্মসম্প্রদায়ের আধ্যাত্মিক গুরু পোপ স্বীকার করে নিয়েছেন। একেই বলে ইতিহাসের উচিৎ বিচার।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশে যুদ্ধ হয়েছিল। যুদ্ধ চলেছিল দীর্ঘ ৯ মাস। পাকিস্তানি সামরিক জান্তা অন্যায়ভাবে যুদ্ধ লাগিয়ে ৩০ লক্ষ বাঙালিকে হত্যা করেছিল। পাকিস্তানিরা এই অন্যায়কে স্বীকার করে নিয়ে ভুলের জন্য এখনও ক্ষমা ভিক্ষা করেনি। কিন্তু সে-দেশের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী গত ২২ ডিসেম্বর স্বীকার করেছেন যুদ্ধটি অন্যায় ছিল। ইতিহাসের বিচার বলছে, অন্যায় করাকে যখন স্বীকার করা হয়েছে, তখন স্বাভাবিকভাবেই ক্ষমা ভিক্ষাও চাইতে হবে। ইতিহাসের নিয়তি এই অমোঘতারই ইঙ্গিত করে। কিন্তু অতিশয় পরিতাপের বিষয় এই যে, একজন বিদেশী রাজনীতিবিদ ১৯৭১-য়ের যুদ্ধকে প্রকারান্তরে মানবতাবিরোধী যুদ্ধ বলে স্বীকার করে নিয়েছেন এবং বিপরীতে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধী রাজনীতিকরা সেটা স্বীকার করছেন না। যে-সব রাজনীতিকরা ১৯৭১-য়ে পাকিস্তানি আক্রমণকারীদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, হানাদার বহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাঙালি হত্যায় লিপ্ত হয়েছিলেন, যে-যুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষকে হতা করা হয়েছিল । তখন তাঁরা এই হত্যার বিরোধিতা করতে পারেননি, যদিও বিরোধীতা করাই ছিল প্রকৃত রাজনীতিক কর্তব্য। এই কর্তব্যচ্যুত হয়ে তাঁরা সে-দিন রাজনীতিক মেরুদ-হীনতার পরিচয় দিয়েছিলেন। বিশ্ববাসী সে ইতিহাস জানে। যেমন জানেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ইতিহাসের কোনও না কোনও বাঁকে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদেরকে সে-কর্তব্যচ্যুতির খেসারত দিতেই হবে। মনে হয় ক্রমে সে-সময় সমাগত হচ্ছে।
যুদ্ধাপরাধীরা এখনও বাংলাদেশে রাজনীতি করেন, কিন্তু তাঁদের কৃত যুদ্ধাপরাধের উপলব্ধিটা তাঁদের হয় না, তাঁরা মনে করেন পাকিস্তানের অখ-তা ৩০ লক্ষ মানুষের প্রাণের চেয়ে বড়। যদিও পাকিস্তানের কোনও কোনও নাগরিকের এমন মনে হয় না। এইসব তথাকথিত বাঙালিরা এখনও তাঁদের সেই পাকিস্তানি মতাদর্শিক অবস্থান ধরে রেখেছেন এবং দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেন। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বাংলাভাই সৃষ্টি করেন, শক্তিপ্রদর্শনহেতু সারা দেশে একসঙ্গে ৫০০ স্থানে বোমা বিস্ফোরণ ঘটান, দশ ট্রাক অস্ত্র আমদানি করেন, গ্রেনেড হামলা করে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে হত্যার অপপ্রয়াস চালান, হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলা সংঘটিত করেন, রগ কেটে মানুষ মরেন, চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে বুদ্ধিজীবী হত্যা করেন।
বেশি কীছু বলতে চাই না। ক্রমে সময় সমাগত হচ্ছে। সত্যকে একদিন স্বীকার করতেই হবে। অন্যায় করে কেউ পার পেয়ে যায় না। ইতিহাসের নিয়ম। সক্রেটিসের হত্যাকারীদেরকে আড়াই হাজার বছর পরে হলেও হত্যাকারী হিসেবে লোকে চিহ্নিত করেছে। বাংলাদেশে ১৯৭১-য়ের যুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষ হত্যকারী ও সাড়ে চার লক্ষ নারীর ইজ্জৎ লুণ্ঠনকারীকে ইতিহাস ক্ষমা করবে না। ইতিহাস সত্য উন্মোচনে বড় বেশি নির্মম।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com