1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
শনিবার, ০৩ মে ২০২৫, ০১:৫১ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

আজ বড়দিন : প্রভু যীশুর জন্মদিন : ফাদার সুধীর গমেজ

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৮

ভূমিকা
প্রতি বছর ২৫ ডিসেম্বর আমাদের বড়দিন। প্রভু যীশুর জন্মদিন এদিন। পৃথিবীর খ্রিস্টবিশ্বাসী ভক্তজন এ দিনটি অত্যন্ত আনন্দ, ভক্তি ও ভালবাসা নিয়ে উদ্যাপন করে। আমাদের পরিবারে, সমাজে যখন কোন সন্তান জন্ম নেয় আমরা আনন্দ করি। যখন আমাদের বাড়িতে বা এলাকায় কোন বড় অতিথী আসে আমরা বাড়িতে তাদের সাদরে বরণ করে নিই, স্বাগত জানাই। রবি ঠাকুরের ভাষায়, যেদিন মহান ঈশ্বর, এ ধরায় জন্ম নিলেন সেদিনের চেয়ে বড় কোন দিন আর হতে পারে ? না, পারে না। এই দিনের চেয়ে আনন্দের আর কোন দিন হতে পারে ? না পারে না। তাইতো এদিনটি অর্থের দিক দিয়ে, তাৎপর্যের দিক দিয়ে সবচেয়ে বড়, বড়দিন। এ দিনে আমরা আনন্দ করি, উৎসব করি, প্রভুকে আমাদের হৃদয়ে, পরিবারে, সমাজে বরণ করে নিই, আর তার আগমন তাৎপর্য ধ্যান করি, তার শিক্ষানুসারে জীবন যাপন করার সংকল্প গ্রহণ করি।
যীশুর খ্রিস্টের জন্ম মানব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম ঘটনা
সত্যিই তাই। যীশুর জন্মের মধ্য দিয়ে পুরাতন বছরের পঞ্জিকা বাতিল আর নতুন ইতিহাসের সূচনা ঘটে। যীশুর জন্মই ইতিহাসকে দু’ভাগে বিভিক্ত করেছে-‘খ্রিস্টপূর্ব’ আর ‘খ্রিস্টাব্দ’ । আসলে ইতিহাস একটিই আর তা সম্পূর্ণ ঈশ্বরে হাতে। যীশুর জন্মের মধ্য দিয়ে মুক্তির ইতিহাস মানুষের জাগতিক ইতিহাসে জড়িত হয়েছে। ঈশ্বর মানুষের ইতিহাসের প্রভু হয়ে অদৃশ্য ভাবে এই ইতিহাসকে দিনের পর দিন পূর্ণতার দিকে পরিচালনা করছেন। বিশ্বাসের দৃষ্টি নিয়ে দেখলে আমরাও দৈনিক বাস্তব জীবনে ঈশ্বরের উপস্থিতি ও পরিচালনা উপলদ্ধি করতে পারি।
বড়দিন: মানব জাতির জন্য ঈশ্বরের ভালবাসার প্রকাশ
মানব জাতির জন্য ঈশ্বরের ভালবাসা যে কত গভীর তা বড়দিন না থাকলে বোঝা যেতো না। ঈশ্বর প্রেম স্বরূপ। সৃষ্টির শুরুতেই ঈশ্বর এই প্রেমের পরিচয় দিয়েছেন। আর এই প্রেমের টানেই তিনি মানবদেহ ধারণ করলেন। তাই বড়দিন হচ্ছে ঈশ্বর আর মানুষের মধ্যে খাঁটি ভালবাসার গল্প। বড়দিনেই আমাদের প্রথম সাক্ষাৎ হয় ঈশ্বরের সাথে। এটাই ঈশ্বরের পরিকল্পনা। রবি ঠাকুর তার গানে বলেছেন, ‘তাই তোমার আনন্দ আমার ’পর, তুমি তাই এসেছ নীচে, আমায় নইলে, ত্রিভুনেশ্বর, তোমার প্রেম হত যে মিছে।’ অর্থাৎ, মানুষকে ভালবেসেছেন বলেই ঈশ্বর স্বর্গ থেকে নীচে নেমে এলেন। অর্থাৎ, তিনি এই পৃথিবীতে মানব রূপে জম্ম নিলেন শুধু আমাদের ভালবাসতে ও মুক্তি দিতে। মানুষের প্রতি ঈশ্বরের ভালবাসা কতই না মহান !
ঈশ্বর মানুষ হয়ে জন্ম নিলেন-পৃথিবী হলো তাঁর আবাস-আমরা হলাম তাঁর অংশী
মানুষের ধারনায় ছিল-ঈশ্বর আমাদের সীমানার অনেক বাইরে থাকেন, উপরে, স্বর্গে, তাকে দেখা যায় না, ছোয়া যায় না, ধরা যায় না, তিনি অসীম, নিরাকার, তিনি অনাদি-অনন্ত ইত্যাদি। যে ঈশ্বর অগ্নি-ঝলক ও তূর্যবধনির মধ্যে কিংবা ঘন মেঘে বিদ্যুৎ-ঝলক ও বজ্রনাদের মধ্যে কথা বলতেন-যাকে সবাই ভয় পেতো; সেই ঈশ্বর আমাদের মত রক্ত-মাংসের মানুষ হলেন, মানব দেহ ধারণ করলেন। তিনি অতি দূরের, অপরিচিত কেউ নন; তিনি আমাদের অতি কাছের, অতি প্রিয়জন, আপনজন। এই ঈশ্বরের দেহধারণ বা মানুষ হওয়াই হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে আনন্দের বড়দিন। এর মধ্য দিয়ে ঈশ্বর আমাদের পরিমন্ডলে আমাদের সঙ্গে তার ভালবাসার আবাস গড়লেন। যাদের তিনি স্বরূপে সৃষ্টি করেছেন সেই সৃষ্টজীবদের কাছেই তিনি ফিরে এলেন; তাদের আপন করে নিলেন। যেন গোটা মানবজাতিকে (সব ধর্মের) তিনি তার কাছে ফিরিয়ে আনতে পারেন।
মহাপ্রাণ সাধু বাসিলের মতে, “আগুন যেমন লোহাতে; তেমনি ঈশ্বরত্ব মানুষে অবস্থান করে।” কিন্তু রূপান্তর অনুসারে নয়, অংশ ভাগিতার অনুসারে। বস্তুত আগুন লোহাতে যায় না, বরং নিজের স্থানে থেকে লোহাকে নিজের গুণের অংশভাগী করে; এই অংশভাগিতার ফলে তার ঘাটতি পড়ে না, বরং নিজের প্রসারণ ঘটে। তেমনি ঈশ্বর নিজে থেকে নিজেকে কখনও বিচ্ছিন্ন না করে মানুষের মাঝে তাঁবু খাটালেন; কোন পরিবর্তনের অধীন না হয়ে তিনি আমাদের মত মানুষ হলেন, আমাদের তার ঈশ্বরত্বের অংশী করলেন, আর পৃথিবী তাকে আপন বুকে গ্রহণ করলো।
দরিদ্র বেশে যীশুর আগমন
যিনি মহান ঈশ্বর, প্রভু, ত্রাণকর্তা, মুক্তিদাতা, খ্রিস্ট রাজা-তার জন্ম হলো কিনা গোয়ালঘরে, অতি নীরবতায়, ন¤্রতায়, গ্রামে, গরীব বেশে। ঈশ্বরের লীলাখেলা বোঝা বড় দায়! তিনি এই পৃথিবীতে আবির্ভূত হলেন চুড়ান্ত দৈন্য-দশায়, দাসেরই দশায়। তার প্রমান আমরা আবার দেখি অপরাধী দাসেরই মতো তাকে ঘৃণ্য-মৃত্যু বরণে।
তিনি দাসরূপে আবির্ভূত হলেন, যেন আমরা যারা পাপের দাসত্বের অবস্থায় রয়েছি-আমরা যেন মুক্তি পেতে পারি। পাপ, অন্ধকার, অসত্য, অন্যায়, অত্যাচার, কষ্ট, অশান্তি, অন্যায্যতা, মৃত্যুর হাত থেকে তিনি আমাদের মুক্তি দিতে এসেছেন। তাই আমরা আজ আনন্দ করি, উল্লাস করি, রাখালদের মত উপহার নিয়ে যাই, তাকে কৃতজ্ঞতা জানাই।
যীশুর আগমনের কারণ
যীশু এসেছেন যেন মানব জাতি পাপ থেকে মুক্তি পায়, পুণ্যের পথে চলে। অন্ধকার থেকে আলোতে, অসত্য থেকে সত্যে, দুঃখ, কষ্ট, অন্যায়-অত্যাচার থেকে আনন্দে, শান্তিতে জীবন যাপন করতে পারে। যীশু এ কারনেই এলেন যেন মাংসে নিহিত মৃত্যুকে ধ্বংস করে মানুষকে অনন্ত জীবনের পথ দেখাতে পারেন। যেন অন্ধকার, রাত্রি, মৃত্যু আর প্রভুত্ব করতে না পারে। তিনি মানুষ হয়েছেন- যেন মানুষ ঈশ্বরময় হতে পারে, তিনি মানুষের কাছে এসেছেন- যেন মানুষ তার কাছে যেতে পারে; তিনি প্রথম ভাললবেসেন- যেন মানুষ ঈশ্বরকে, পরস্পরকে ভালবাসতে পারে। যীশু এলেন যেন আমরা মুক্তি পেতে পারি; যেন অনন্তকাল তার সঙ্গে থাকতে পারি।
আমাদের করণীয়
১। মা-মারীয়ার (মরিয়ম) মত মনে প্রাণে যীশুকে গ্রহণ করবো, প্রভুর ইচ্ছা পালন করব; তার শিক্ষা মেনে চলবো।
২। যীশুর মত মনে প্রাণে দরিদ্র হবো, ন¤্র হবো। সমাজের দরিদ্র, অভাবী, অসহায় মানুষকে বেশী করে ভালবাসবো।
৩। রাখাল, তিন পন্ডিতের মত সবর্দা যীশুর খোঁজ করব; সবর্দা যীশুর সঙ্গে থাকবো; অবিশ্বাসী, অকৃতজ্ঞ হবো না।
৪। যীশুর মত জীবন দান করবো। অথাৎ, নিজেকে নিয়ে এতো ব্যতিব্যস্ত হবো না; অন্যের প্রয়োজন, চাওয়া-পাওয়ার প্রতি আগে গুরুত্ব দিব, অন্যের উপকারে আসবো, আতœত্যাগ করবো।
৫। রাত্রি, অন্ধকারতুল্য সকল পাপ, মন্দতা, খারাপ অভ্যাস থেকে নিজেকে বিরত রাখবো; আলোর, সুন্দন্দের, ভালোর মানুষ হবো; সহজ, সরল, পবিত্র জীবন যাপন করবো।
৬। শান্তি, ন্যায্যতা, মিলন, কল্যান, মঙ্গণকর কাজের সাথে সবর্দা নিজেকে নিযুক্ত করা; ভালবাসা, দয়া, ক্ষমার মানুষ হয়ে উঠা; কারণ এরূপ হৃদয়ে যীশু বার বার জন্মগ্রহন করেন।
৭। দেহের, বাড়িঘরের বাহ্যিক প্রস্তুতির পাশাপাশি আধ্যাতিœক প্রস্তুতি নিতে হবে-যেমন-পাপস্বীকার করা, পবিত্র খ্রিস্টযাগে অর্থপূর্ণভাবে অংশগ্রহণ করা, মন্ডলীতে দান করা, গরীবদের সাহায্য করা, ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্ক পুনরায় ঠিক করা, ইত্যাদি।
উপসংহার
যীশুর জন্ম ভালবাসা, একতা, মিলনের চিহ্ন। আমাদের ব্যক্তিগত পারিবারিক ও সমাজ জীবনে এই প্রেম, ক্ষমা, শান্তি-মিলন, সহযোগিতা, সহমর্মিতা, পুনর্মিলনের মাঝেই বড়দিনের আনন্দ নিহিত। সমস্ত ভুল বুঝাবুঝি, মনোমালিন্য,ঝগড়া-বিবাদ, অশান্তি, হিংসা বড়দিনের আনন্দ-শান্তিকে নষ্ট করে। এসব থেকে জীবনের পরিবর্তন করে যীশুর মত ন্যায়, শান্তি, প্রেমের রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে ও ঈশ্বর-সদৃশ্য হয়ে উঠতে এবং ভালবাসায় যীশুকে গ্রহণ করতে ২৫ ডিসেম্বর,বড়দিন, বার বার ফিরে আসে।
লেখক : , ওএমআই, প্রধান শিক্ষক, নারায়ণতলা মিশন উচ্চ বিদ্যালয়

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com