1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ০৪:০০ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

নিঃস্বতাকে নির্মূল করার প্রত্যয়ে এখন উজ্জীবিত হবার সময়

  • আপডেট সময় সোমবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৮

‘কেস জন্ডিস’ বলে একটা কথা আছে। এই অপভাষাটি (শ্লেঙ্গুয়েজ) সাধারণত ব্যবহার করা হয় কোনও ভাববস্তু কিংবা বিষয়ের খারাপ অবস্থা বুঝাতে। চিকিৎসাবিদ্যায় জন্ডিস নাকি কোনও রোগ নয়, রোগের লক্ষণ বিশেষ। অর্থাৎ জন্ডিস কোনও কোনও রোগের প্রতিক্রিয়ারূপে প্রকাশ পায়। ব্যাধিগ্রস্ত সমাজব্যবস্থারও বিশেষ বিশেষ লক্ষণ প্রষ্ফূটিত হতে পারে কিংবা হয়। পুঁজিবাদ যখন কোনও সামাজে জেঁকে বসে তখন সেখানে স্বাভাবিক নিয়মে মুনাফার প্রাদুর্ভাব ঘটে এবং উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। এই মুহূর্তে যেমন আমাদের সমাজের চালিকাশক্তি বলা যায় মুনাফা। যেখানে মুনাফা সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করে সেখানে বিভিন্ন ধরণের দুর্লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। সমাজে মানুষের মধ্যে উত্তরোত্তর বৈষম্য বাড়তে থাকে, সমাজ বলতে গেলে সম্পূর্ণরূপে মানবিকতাহীন অন্তঃসারশূন্য অবস্থায় পর্যবশিত হয় এবং সকল প্রকার ভাববস্তুর পণ্যায়নের নীতি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠে, বিমানবিকীকরণের তুঙ্গতা সম্ভাব্যতার সকল মাত্রা অতিক্রম করে। তার বড় প্রমাণ পৃথিবীতে ইতোমধ্যে দুই দুইটি বিশ্বযুদ্ধ ও হিরোসিমা-নাগাসাকি বিপর্যয়ের সংঘটন। অর্থাৎ পুঁজিবাদ সকল যুদ্ধের কিংবা অশান্তির জননী। বিশ্বজুড়া এইরূপ অবস্থায় কোনও একটি দেশে বিশেষ বিশেষ লক্ষণের প্রাদুর্ভাব ঘটে। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সে-লক্ষণগুলোর একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করা যায়, যেমন: সম্পদের বৈষম্য বৃদ্ধি, সম্পদ আত্মসাৎ, রাজনীতিক সন্ত্রাস, স্বৈরাচার, অগণতান্ত্রিকতা, শ্রেণিসন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মের রাজনীতিক ব্যবহার, মানুষে মানুষে বৈরিতা, অপ্রতিরোধ্য আত্মপরতা, দুর্নীতি, প্রতারণা, মিথ্যাচার, রাজাকারজিবিতা, অপসংস্কৃতির চর্চা, ঘুস, ধর্ষণ-গণধর্ষণ, অসামজিক ক্রিয়াকর্ম ইত্যাদি। এমনকি আবির্ভাব ঘটতে পারে বাংলাভাইয়ের মতো মানুষের, একজন চোরাচালানী হয়ে যেতে পারেন জনপ্রতিনিধি কিংবা একজন সচিব বলে বসতে পারেন বাংলাদেশের অর্ধেক লোক মারা গেলে তবেই বাংলাদেশকে দুর্গত বলে অভিহিত করা যাবে। আপাতদৃষ্টিতে এইসব খতরনাক প্রপঞ্চের প্রাদুর্ভাব যেমন অসম্ভব কীছু নয় তেমনি খুবই সম্ভব, দেশের স্থানে স্থানে ‘মানবতার দেয়াল’ গজিয়ে উঠা।
পত্রিকান্তরে এই ‘মানবতার দেয়াল’ সম্পর্কে প্রকাশ, জগন্নাথপুর পৌর শহরে এই দেয়াল স্থাপিত হয়েছে, কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের দেয়ালে। এসব দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে শার্ট, প্যান্ট, গেঞ্জি, জ্যাকেট, সোয়েটার, জুতা, মোজাসহ শীতবস্ত্র। গত শনিবার এই দেয়াল প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। এই ‘মানবতার দেয়াল’কে কেউ কেউ ‘মানবতার প্রকাশ’ বলে বিবেচনা করতেই পারেন। আপাতদৃষ্টিতে যে-কারও কাছে তা মনে হতেই পার। কিন্তু এই ‘মানবতার দেয়াল’ নামক প্রপঞ্চটি নিয়ে যে-কেউ উল্টো করে ভাবতে পারেন। তাঁর কাছে এই ‘মানবতার দেয়াল’টি অমানবিকতার দেয়াল রূপে প্রতিপন্ন হতে পারে। যে-কেউ ভাবতে পারেন, আসলে এই ‘মানবতার দেয়াল’ প্রকৃতপ্রস্তাবে মানতার প্রকাশ নয়, শোষণভিত্তিক সমাজের গভীর থেকে উৎপন্ন শোষণের বীভৎসতারই প্রতিরূপ, মানব দেহের বড় কোনও রোগের উপস্বর্গ হিসেবে প্রকাশিত জন্ডিসের মতো। জন্ডিসকে অভিনন্দিত করার যেমন কোনও যুক্তি থাকতে পারে না, তেমনি এই তথাকথিত ‘মনবতার দেয়াল’কে মানবতার চর্চা বলে গ্রহণ করার কোনও যৌক্তিকতা নেই। মানুষের নিঃস্বতাকে লালন ও চর্চা নয়, নিঃস্বতাকে নির্মূল করার প্রত্যয়ে এখন উজ্জীবিত হবার সময়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com