1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ১২:০৪ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

নামকরণে বাংলার বদলে ইংরেজির ব্যবহার অসঙ্গত

  • আপডেট সময় সোমবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৮

কেউ যদি বলেন, “নিলাদ্রী নয় ‘শহীদ সিরাজ লেক’ বলুন।” এমন করে বলা বোধ করি সঙ্গত নয়। ‘লেক’ শব্দটিকে ‘হ্রদ’ করে দেওয়া কিংবা ‘হ্রদ’ শব্দটির অন্য কোনও প্রতিশব্দ ব্যবহার করা উচিত। অবশ্য ‘শহীদ সিরাজ হ্রদ’ বলা যায়। যেহেতু ‘লেক’ (যথোপযুক্ত উচ্চারণ ‘লেইক’) শব্দটি ইংরেজি এবং এর বাংলা প্রতিশব্দ আছে এবং ধ্বনিমাধুর্যে ‘হ্রদ’ শব্দটি ‘লেক’ শব্দটির চেয়ে কোনও অংশেই অনুৎকৃষ্ট নয়, তাছাড়া অর্থ দ্যোতনার দিক থেকেও অপকৃষ্ট নয়। কোনও প্রতিথ জলাধারের নামকরণের ক্ষেত্রে ‘হ্রদ’ শব্দটিই যথেষ্ট। ‘হ্রদ’কে উপেক্ষা করে ‘লেক’কে নামকরণের জন্য পছন্দ করার বিষয়টি নিঃসন্দেহে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী মানসতার নামান্তর। বাংলাদেশ পৃথিবীতে এমন একটি দেশ, যে-দেশ বিদেশি, বিজাতি, বিভাষী ঔপনিবেশিকতার নিগ্রহ থেকে মুক্তির আকাক্সক্ষায় প্রণোদিত হয়ে ৩০ লক্ষ প্রাণ ও ৪ লক্ষাধিক মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে এবং তারও আগে ইংলিশভাষী ইংরেজদের ঔপনিবেশিকতা থেকে মুক্তির সংগ্রামে প্রাণপণ লড়াই করতে কসুর করেনি, সে-দেশের একটি জলাধারের নামের সঙ্গে ঔপনিবেশিক শাসকদের ভাষার একটি শব্দকে জুড়ে দেওয়ার নিহিতার্থ একটাই, আর সেটা হলো : ঔপনিবেশিকতার সাংস্কৃতিক দাসত্বের কাছে নতি স্বীকার করা। দেশের জ্ঞানীজন যে-মানসতাকে ‘দেশের ঠাকুর ফেলে বিদেশের কুকুরকে আদর করে বুকে টানার আদিখ্যেতা’ বলে তিরস্কার করেছেন, আজ থেকে বহুবর্ষ আগে। সেই বাতিলকৃত নীতিকে নতুন করে প্রয়োগের কোনও প্রয়োজন আছে বলে মনে করা উচিৎ নয়।
“নিলাদ্রী নয় ‘শহীদ সিরাজ লেক’ বলুন।” গতকাল একটি দৈনিকের প্রথম পাতায় একটি সংবাদ প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল উদ্ধৃতিচিহ্নে আবদ্ধ এই বাক্যটি। এখানে ‘নিলাদ্রী’ শব্দটির বানানটাই ভুল। আর শুদ্ধ বানানে ‘নীলাদ্রি’ শব্দটির অর্থ দাঁড়ায় ‘নীল রঙের পর্বত’, যা একটি জলাধারের নাম হতে পারে না। প্রকৃতপ্রস্তাবে ভুল লোকেরা ভুল কাজগুলো করেন এবং প্রকারান্তরে নিজেদের পণ্ডিতম্মন্যতার পাণ্ডিত্য জানান দিতে গিয়ে সব কীছু পণ্ড করে ফেলেন। ‘হ্রদ’ শব্দটিকে ফেলে ‘লেক’ শব্দটিকে নামকরণের ক্ষেত্রে নির্বাচন করার বেলায় অনেকটা না হলেও অন্তত কীছুটা হলেও এই পাণ্ডিত্য প্রদর্শন করে পণ্ড করার প্রকরণ প্রয়োগ করা হয়েছে। ‘নিলাদ্রী’ (নীলাদ্রি) নামটি রাখার সময়ও এই পণ্ডিতম্মন্যতা প্রদর্শিত হয়েছিল। বাংলাভাষায় ‘হ্রদ’ শব্দটির ত্রিশটিরও বেশি প্রতিশব্দ আছে। সে-গুলো থেকে যে-কোনও একটা শব্দ নামকরণের জন্য নির্বাচন করা যেতো। কিন্তু সে-সব শব্দকে বাদ রেখে ইংরেজি ‘লেক’ শব্দটিকে একটি জলাধারের নামকরণের জন্য পছন্দ করার কোনও যৌক্তিকতা নেই।
‘লেক’ শব্দটি ‘কম্পিউটার’ শব্দটির মতো অবিকল্প কোনও শব্দ নয়। যেহেতু এই শব্দটি একটি অবাংলা শব্দ এবং এই শব্দটির অর্থদ্যোতনা প্রকাশক শব্দের কোনও অভাব নেই জলসংস্কৃতির দেশ বাংলাদেশে। তা হলে একটি জলাধারের নাম রাখতে গিয়ে ইংরেজির কাছে ভিখেরির মতো হাত পাতা কেন? এই হাত পাতার একটাই নিহিতার্থ, বাঙালির মধ্যে এখনও বাংলাপ্রীতির বদলে ইংরেজিপ্রীতি প্রবলাকারে বিদ্যমান আছে, অন্তত যারা তথাকথিত প-িতজন নিজেদেরকে শিক্ষিত বলে মনে করেন, বাংলা শব্দের মধ্যে কোনও গরিমা তারা কখনওই আবিষ্কার করতে পারেন না। বাঙালিকে জাতিগত এই হীনম্মন্যতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
যথাযথ কর্তৃপক্ষ ‘লেক’ শব্দটিকে একটি বিদেশি শব্দ বলে পরিগণিত করে নামকরণ থেকে শব্দটিকে বাদ দিতে পারেন এবং এই ইংরেজি শব্দটির স্থলে একটি পছন্দসই বাংলা শব্দ প্রতিস্থাপন করে জলাধারটির নামকরণে বিভাষাবর্জনের উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারেন। অন্যথায় উত্তরপ্রজন্মের মানুষেরা একদিন প্রশ্ন করতে পারে, নামকরণে পূর্বসূরিরা বাংলার বদলে ইংরেজির ব্যবহারে আগ্রহী ছিলেন কেন?

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com