বদলে যাচ্ছে সব কীছু । বদলে যচ্ছে গ্রমাঞ্চল। মানুষ বাড়ার সঙ্গে রাস্তাঘাট বাড়ছে, বাড়ছে বাড়িঘর দোকানপাট। অঘাটায় ঘাট হচ্ছে, অপথে পথ। বাড়ছে দখলপ্রবণতা। গ্রামাঞ্চলে এখন আর গরুমহিষ পালন করা হয় না। জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশে গরুমহিষ পালনের হার ক্রমাগত কমছে এবং এখন বলতে গেলে সেটা শূন্যের কোঠায় এসে দাঁড়িয়েছে। আগের দিনে হালচাষের কাজ চালানো ও দুধের চাহিদা মেটাতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক গরু পালনার্থে প্রত্যেক কৃষকের বাড়িতে একটা গোয়ালঘর থাকতো। সম্পন্ন কৃষকেরা তো অর্ধশতাধিক থেকে শতাধিক গরু পালন করতেন। তাঁরা এখন দুয়েকটা দুধের গাভী ভিন্ন হালচাষের জন্য বলদ প্রতিপালন করেন না। এখন সকল কৃষক পরিবারে তাও করা হয় না। তাই সঙ্গত কারণেই কৃষকের বাড়িতে ‘গোয়াল ভরা গরু’ এখন আর দেখা যায় না। বরং ট্রাক্টর ও মাড়াইকলসহ টিনের ডিব্যার দুধেল গাই দেখা যায়। গোচারণ ও গোপাট এখন প্রকৃতপক্ষে নির্দিষ্ট কাজে অব্যবহৃত থাকে অথবা অন্যকাজে ব্যবহৃত হয়। বুঝাই যাচ্ছে এমন একটা পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে গোচারণ ও গোপাটগুলো কীছু লোভী মানুষের জবরদখলে চলে যাচ্ছে। তাঁরা মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রতিনিধি হিসেবে ব্যবসায় করে দুপয়সা কামেিয় নিতে আগ্রহী।
গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠে গ্রামাঞ্চেলে গোচারণ ও গোপাট জোর করে দখল হয়ে যাওয়ার একটি সংবাদ ছাপা হয়েছে। প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, গ্রামাঞ্চেলে গোচারণ ও গোপাট জবরদখল হয়ে যাচ্ছে এবং দখল করে বাজারের দোকান কোঠা তোলছেন এক পক্ষ এবং অন্যপক্ষ এই জবরদখলের প্রতিবাদে জেলা প্রশাসকের দরবারে স্মারকলিপি প্রদানসহ প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করছেন। জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলী গ্রামের বাজারের উত্তরপাশে গোচারণ ও গোপাট জোরপূর্বক দখল করে বাজার প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। জোরপূর্বক বোধ করি এই জন্য যে, বাংলাদেশে সাধারণত গোচারণ ও গোপাটে একক ব্যক্তিমালিকানা নয়, বরং গ্রামসমাজের যৌথমালিকানা স্বীকৃত। প্রশাসন যদি এই গোচারণ ও গোপাটগুলো রক্ষা করার কোনওরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ না করেন তবে স্বাভাবিকভাইে সেগুলো ব্যক্তিবিশেষদের দখলে চলে যাবে এবং প্রকারান্তরে বসতি কিংবা বাজার ইত্যাদিতে পরিণত হবে এবং শেষ পর্যন্ত কৃষক ট্রাক্টর ও মাড়াইকল নিয়ে চাষের মাঠে যাওয়ার পথসহ ধান শুকানোর জায়গায় হারাবেন।