ইতোমধ্যে পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে হাওর জলমগ্ন হয়ে বোরো ফসল হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জেলার প্রান্তিক চাষিরা। ফসল হারানো কৃষকের কষ্টের হাহাকার এখনো চলছে হাওর এলাকায়। বোরো ফসল হারানোর কষ্টের দাগ শুকাতে না শুকাতেই ফের পাহাড়ি ঢল আর ভারি বর্ষণে আক্রান্ত হয়েছেন হাওরপাড়ের মানুষ।
ইতোমধ্যে জেলার ৬টি উপজেলায় পাহাড়ি ঢলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ ও তাহিরপুরের নি¤œাঞ্চলে বন্যাপরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বিভিন্ন স্থানে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সুনামগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর সড়কের অধিকাংশ স্থানে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। নি¤œাঞ্চলে ঢলের পানিতে অনেক বাড়ি-ঘর বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে।
সুনামগঞ্জ পাউবো সূত্রে জানা যায়, অতিবৃষ্টিপাত এবং পাহাড়ি ঢলের পানিতে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীসহ অন্যান্য নদীর পানি আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে।
বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকলে পুরো জেলায় বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। গত কয়েক দিনের পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানিতে শহরের অনেক নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়ে রাস্তা-ঘাট ডুবে গেছে। এতে সাধারণ মানুুষ ও যান চলাচলে স্বাভাবিক জীবন-যাপন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। বিশেষ করে অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। লাগাতার বৃষ্টিপাত বন্ধ না হলে জেলাজুড়ে প্রবল বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
গেলো বোরো মৌসুমে আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া জেলার প্রান্তিক চাষিদের ক্ষতিপূরণে এখনো পর্যন্ত কেউ এগিয়ে আসেনি। তাদের সহায়তায় সরকারি কিংবা বেসরকারি পক্ষ থেকে নেয়া হয়নি কার্যকর কোনো উদ্যোগ। ফসল হারানোর কষ্টের দাগ শুকাতে না শুকাতেই ফের পাহাড়ি ঢলে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই পর্যন্ত জেলার নি¤œাঞ্চলে অনেক বাড়ি-ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সংবাদ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশ ও প্রচার হয়েছে। পানিবন্দি এলাকাগুলোতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা নিয়মিত পরিদর্শনে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন এবং দরিদ্র ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ সরবরাহসহ বিভিন্ন সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করছেন। আমরা আশা করবো জনপ্রতিনিধি ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পানিবন্দি দরিদ্র ও অসহায় মানুষের পাশে থেকে তাদের পর্যাপ্ত সহযোগিতা প্রদান করবেন। বিশেষ করে গেলো বোরো মৌসুমে ফসলহারা কৃষক পরিবার যারা পানিবন্দি হয়ে ফের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। দেশের অর্থনীতির বড় একটি চালিকা শক্তি হচ্ছে হাওরপাড়ের বিশাল প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। কৃষক বাঁচাতে সরকারের পাশাপাশি সামাজিকভাবেও উদ্যোগী হওয়া জরুরি বলে আমরা মনে করি।