গতকাল দৈনিক সুনামগঞ্জের একটি সংবাদশিরোনাম ছিল, “চাকুরী দেওয়ার নামে মার্কুলিতে লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকরা”। বাংলাদেশে কাজ করে পেট চালানোর অর্থনীতি বিকশিত হয়ে ওঠেনি এখনো। গ্রামের বেকার মানুষরা তাই শহরের কাজের খোঁজে ভিড় করছে। শহরে অনেকটা রোহিঙ্গাদের মতো উদ্বাস্তুর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। এই অভাব অনটনের দেশে ক্ষুধার্থ মানুষের শ্রম শস্তায় কেনার জন্য চাকুরির বাজারটাকেও সচেতনভাবে সংকোচিত করে, এই যাকে বলে একেবারে, ছোট করে রাখা হয়েছে। অর্থনীতিটিাকে এই পর্যন্ত টেনে বড় করা হয়েছে যাতে কম সংখ্যক ধনী লোক আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হতে পারে কিংবা হতে পারে টাকার কুমির। কিন্তু অল্প সময়ে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের প্রচলিত অর্থনীতির কারণে শ্রমিককল্যাণধর্মী কলকারখানার পত্তন ঘটছে না এবং প্রকারান্তরে শ্রমিকদেরকে শ্রমের ন্যার্য্য মূল্য না দিয়ে অস্বাভাবিক বাড়তি মুনাফা নিশ্চিত করার পুঁজিবাদী পথের উন্মষ ঘটছে। কাজ না পেয়ে অভাবের তাড়নায় মানুষ উপার্জনের বিভিন্ন অবৈধ পথ অনুসরণ করছে। বাংলাদেশে অবৈধ উপার্জনের পথের বা কর্মকা-ের একটি তালিকা তৈরি করলে সেটা এতোটাই দীর্ঘ হতে বাধ্য যে, এই সুনামকণ্ঠ পত্রিকার পুরো চার পৃষ্ঠায় হয় তো কুলাবে না।
সুইজারর্যা- একটি পুঁজিবাদী দেশ। সেখানে কারগারগুলো বেকার হয়ে পড়েছে। কারাগারে রাখার মতো কোনও অপরাধী পাওয়া যাচ্ছে না। এর অর্থ সেখানে কেউ অপরাধ করছে না। যে-কোনও সমাজে পরাস্বপহরণ সবচেয়ে বড় একটি অপরাধ এবং কোনও একটি নির্দিষ্ট সমাজে সাধারণত সম্পদ আহরণের প্রক্রিয়ার মধ্যে উদ্ভূত দ্বন্দ্ব থেকেই অধিকাংশ সামাজিক রাজনীতিক অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে। কেউ যখন চরি করে তখন সম্পদ অহরণই তার মূল লক্ষ্য নির্ধারিত থাকে। সুলতান মাহমুদের ১৭ বার ভারত আক্রমণের লক্ষ্য রাজ্যবিস্তার ছিল না, সম্পদ আহরণ ছিল তার মূল অনুপ্রেরণা। বাংলাদেশে ২৪ বছরের পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনের লক্ষ্যও ছিল তৎকালের পূর্বপাকিস্তানের সম্পদ অবাধে লুণ্ঠন কারার সুবর্ণ সুযোগ অব্যাহত রাখা । ৭১-য়ের যুদ্ধটাও পাকিস্তানিরা করেছিল সম্পদ লুণ্ঠনের প্রক্রিয়া অক্ষ্ণুœ রাখার অভিপ্রায়ে। মানুষ তার মৌলিক পাঁচটি চাহিদা পুরনে ব্যর্থ হলে প্রতারণা, চুরি, ডাকাতি, লুণ্ঠন, যুদ্ধ সব কীছু করে এবং মেয়েরা শরীর বিকিয়ে দেয়।
তানজিলা নামের এক কিশোরী কতিপয় সহযোগী নিয়ে স্বনামখ্যাত কেয়ার-বাংলাদেশ নামের এনজিওর লগো ব্যবহার করে লোকজনকে চাকরী দেবার নামে অগ্রিম টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তা উঠতেই পারে। অবাক হওয়ার তাতে কী আছে। এমন তো আকসার ঘটছে বাংলাদেশে। ধরাও পড়ছে। কিন্তু এইসব প্রতারণা কমছে না। কেন কমছে না, তার কারণ বেধ করি এইসব প্রতারণা প্রতিরোধে যথোপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। বৈচারিক ব্যবস্থার কঠোরতায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে এইসব প্রতারণা বার বার সংঘটিত হবে, ঠেকনো যাবে না।