স্টাফ রিপোর্টার ::
তাহিরপুরে মোফাজ্জল হোসেন (১৭) নামের এক মাদ্রাসার ছাত্র তিন বৎসর ধরে নিখোঁজ রয়েছে। পুলিশ সন্দেহ করছে সে ধর্মীয় উগ্রবাদি সংগঠনে যোগ দিয়েছে। নিখোঁজের বিষয়ে চলতি বছরের ১৪ জুলাই তাহিরপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (নং ৪৯৯) করা হয়েছে। নিখোঁজ ব্যক্তি তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের লাকমা পশ্চিমপাড়া গ্রামের সিরাজ মিয়া ও মোছাম্মৎ হাজেরা খাতুনের দ্বিতীয় ছেলে।
পুলিশ ও নিখোঁজ মোফাজ্জল হোসেনের পিতা সিরাজ মিয়া জানান, মোফাজ্জল হোসেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার আমতলী মাদ্রাসায় লেখাপড়া করতো। ২০১৪ সালের আনুমানিক জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে সে কোরবানি ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে আসে। পরে ১৫ দিন ঈদের ছুটি কাটিয়ে বাড়ি থেকে আমতলী মাদ্রাসায় যাওয়ার কথা বলে বের হয়ে যায়। বাড়ি থেকে যাওয়ার পরপরই পরিবারের লোকজনের সঙ্গে তার সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজি করে তাকে না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তার আর কোনও খোঁজ করেনি। সম্প্রতি নিখোঁজের বিষয়ে সরকারি ঘোষণা জানতে পেরে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় সাধারণ ডায়েরি করাহয়।
মোফাজ্জল হোসেনর পিতা মো. সিরাজ মিয়া জানান, ছোটকাল থেকে মোফাজ্জল নামাজ পড়তো ও ইবাদত করতো। সে জন্য প্রথমে তাকে নিজ গ্রামের লাকমা মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেন তিনি। পরে একই উপজেলার বাঁশতলা মাদ্রাসা ও বাদাঘাট মাদ্রাসায় ভর্তি করে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা নেন। তিনি আরো জানান, তার আট ছেলে মেয়ের মধ্যে মোফাজ্জল দ্বিতীয়। অন্যান্য ছেলেমেয়েরা মাদ্রাসা ও স্কুলে লেখাপড়া করে। তিনি পেশায় একজন কৃষক। অভাব আর অনটনের মধ্যে দিয়ে দিন কাটে তাদের। মাদ্রাসায় লেখাপড়া করতে খরচ কম হওয়ায় এবং ধর্মীয় বিষয়ে পড়ানো হয় বিধায় তাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেওয়া হয়।
মোফাজ্জল হোসেনর মা হাজেরা খাতুন জানান, তিন বছর আগে কোরবানি ঈদের কয়েক দিন পর মোফাজ্জলকে তার বাবা সিরাজ মিয়া ফটিকছড়ি আমতলী মাদ্রাসায় যাওয়ার জন্য ট্যাকেরঘাট এলাকা থেকে সুনামগঞ্জগামী ভাড়াটে মোটরসাইকেলে তুলে দেন। এই ছিলো ছেলের সঙ্গে মায়ের শেষ
দেখা। তারপর আর কোনও খোঁজখবর নেই। এর কয়েকমাস পর সিরাজ মিয়া চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ওই মাদ্রাসায় গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তার ছেলে সেখানে যায়নি। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তার ছেলের কোনও খবর দিতে পারেননি। পরে খোঁজাখুজি বাদ দিয়ে দেন তারা।
শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. খসরুল আলম জানান, তিনি নিখোঁজের বিষয়টি জানতেন না। তিনি বলেন, ‘কোনও উগ্র সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর সঙ্গে মোফাজ্জল জড়িত থাকলে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক’।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, পুলিশ নিখোঁজ মোফাজ্জল হোসেনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ করছে। তাকে খুঁজে বের করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ। ইতোমধ্যে তার পরিবার ও মোফাজ্জলের ব্যক্তিগত ইতিহাস সংগ্রহ করার জন্য ব্যাপক অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে।
তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ জানান, মোফাজ্জলের ছবি সংগ্রহ করা হচ্ছে। নিখোঁজের বিষয়ে ফটিকছড়ি থানায় একটি বার্তা পাঠানো হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে তাকে খুঁজে বের করার সব ধরনের প্রচেষ্টা চালানো হবে’।
পুলিশ সুপার মো. হারুন অর রশিদ বলেন, মাদ্রাসা ছাত্র মোফাজ্জল নিখোঁজের বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি, তাকে আমরা খোঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছি, আমরা চট্টগ্রামের হাট হাজারি মাদ্রাসায়ও তাকে খোঁজেছি, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তার খোঁজ করছে পুলিশ। আমরা তার সম্পর্কে যাবতীয় সকল প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করছি’।