তারুণ্যের মধ্যে সাধারণতই উদ্যমের প্রাবল্য বিরাজ করে। সমাজের পক্ককেশ প্রাজ্ঞরা মনে করেন, তারুণ্য যতোটা শক্তিতে ঋদ্ধ ও ঋজু থাকে বুদ্ধি-বিবেচনায় ততোটা নয়। চারপাশে তরুণ প্রজন্মের সাধিত যে-সব ঘটনা ঘটতে দেখা যায় সচরাচর, তা থেকে প্রাজ্ঞদের টানা সিদ্ধান্তই, বিশেষ ব্যতিক্রম বাদে, প্রকারান্তরে স্বাভাবিক ও যৌক্তিক বলে বিবেচিত হয়। কার্যত অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তরুণরা স্বীয় বুদ্ধিমত্তা ও মেধায় নিজেদের যথাযথ যোগ্যতাকে প্রতিপন্ন করতে পারেন না। বিভিন্ন ধরনের পুঁজিবাদী প্রবণতার টানে গা ভাসিয়ে দিয়ে প্রগতিশীলতার পথ থেকে চ্যুত হয়ে পড়েন এবং সস্তা জনপ্রিয়তার লোভে প্রকৃত জনহিতৈষণাবিবর্জিত কাজে নিয়োজিত হয়ে পড়েন নিজের অজান্তেই। সাধারণত এই সস্তা জনপ্রিয়তার ব্যাধিতে বেশি করে আক্রান্ত হন সেইসব তরুণ সমাজকর্মী রাজনীতিবিদরা। আবারও বলি ‘বিশেষ ব্যতিক্রম বাদে’ বিশেষ কেউ কেউ প্রচলিত সস্তা জনপ্রিয়তার পথ না মাড়িয়ে সাধারণ মানুষের কাক্সিক্ষত সেবক হয়ে উঠেন নিজের জনহিতৈষী কর্মপ্রয়াসের বদৌলতে। আমাদের সুনামগঞ্জ পৌরসভার বর্তমান মেয়র নাদের বখত তেমনি একজন ‘বিশেষ’ ব্যক্তি।
নাদের বখত একজন একেবারেই যাকে বলে তরুণ মানুষ। কিন্তু তাঁকে বোধ করি ‘বিশেষ ব্যতিক্রমী’ মানুষ হিসেবেই বিবেচনায় নিতে হবে। তাঁর বড় ভাই আয়ূব বখত জগলুল যখন অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে অনেক বাঁধাবিপত্তি কাটিয়ে পৌরসভা পরিচালনায় পরিপক্কতা অর্জন করতে পেরেছিলেন বলে মনে হচ্ছিল এবং পৌরবাসী তাঁর অভিজ্ঞতায় পরি¯্রুত সেবা পাওয়ার আকাক্সক্ষায় মনে মনে প্রস্তুত ছিল তখন তিনি না ফেরার দেশে চলে গেলেন। আমরা মেয়র হিসেবে পেলাম তাঁর ছোট ভাই নাদের বখতকে। কিন্তু দেখেশোনে মনে হচ্ছে এই তরুণের পরিচালনায় পৌরসভা একবারে মন্দ চলছে না। দৈনিক সুনামকণ্ঠের গতকালের একটি সংবাদশিরোনাম ছিল, “সুনামগঞ্জ পৌরসভায় পশুর বর্জ্য অপসারণে রেকর্ড”। পৌরসভায় ওয়ার্ড ৯টি। মেয়র নাদের বখতের পরিকল্পনা ও দিকনির্দেশনায় মাত্র ১০ ঘণ্টায় এই ৯টি ওয়ার্ডের কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ করেছেন পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। শহরবাসী মেয়রের প্রতি ভীষণ কৃতজ্ঞ ও সন্তুষ্ট। ঈদের পরদিন অনেকে পরিচ্ছন্ন শহরে বেরিয়ে খুব অবাক হয়েছেন, যারপরনাই খুশি হয়ে উঠেছেন ও মনে মনে মেয়রকে এই পরিচ্ছন্নতা কাজের জন্য বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। আমরাও পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও পৌরসভার কর্মবাহিনীকে এবং স্বয়ং মেয়রকে ধন্যবাদ জানাই।
এই পরিচ্ছন্নতাকর্মটি একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে। সদিচ্ছা থাকলে কোনও কাজই অসাধ্য নয়। আমরা আশা করবো আমাদের পৌরসভার এই তরুণ কা-ারী তাঁর তারুণ্যের শক্তি ও মেধা থেকে আমাদের বঞ্চিত করবেন না। তাঁর সুদক্ষ পরিচালনায় আমাদের পৌরসভা উত্তরোত্তর সুন্দর ও সমৃদ্ধ হয়ে উঠুক।