আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন ধরনের রাজনীতিক কার্যক্রম ও তৎপরতা শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে রাজনীতির মাঠ সরগরম হয়ে উঠছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে রাজনীতি ও আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা ক্রমে ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে একটি কথার প্রবাদপ্রতিম খ্যাতি আছে। এই কথাটি হলো, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ নির্বাচনমুখী। কথাটির সত্যতা মিলে নির্বাচনকে নিয়ে বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এই দুই বৃহৎ দলের ইদানিংকার বিভিন্ন দলীয় কার্যক্রম ও তৎপরতা লক্ষ করে। গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠে প্রকাশিত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতিক তৎপরতা সংক্রান্ত সংবাদ প্রতিবেদনে তার সমর্থন মেলে। আওয়ামী লীগের তৎপরতা নিয়ে সংবাদ প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, “দিরাই-শাল্লায় আ.লীগে নতুন মেরুকরণ”। উপশিরোনাম করা হয়েছে, “জয়া সেনগুপ্তার বিরুদ্ধে একাট্টা ৬ মনোনয়ন প্রত্যাশী : শীঘ্রই মহাসমাবেশের ডাক”। অন্য একটি শিরোনামে বিএনপি’র তৎপরতার প্রসঙ্গটি উঠে এসেছে। শিরোনাম করা হয়েছে, “‘সংস্কারপন্থী নেতা’ নজির হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা”।
সংবাদের বিস্তৃত বিবরণে যাবো না। সেখানে যাই লেখা থাকুক না কেন, শিরোনাম হতেই একটা বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা জন্মে যে, দুই বৃহৎ রাজনীতিক দলের অভ্যন্তরেই অন্তর্দ্বন্দ্ব বিরাজমান, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। সার্বিক বিবেচনায় সারা জেলায় প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকায় বোধ করি এমন অন্তর্দ্বন্দ্ব কমবেশি বিদ্যমান আছে। কারণ আমাদের দেশের জাতীয় রাজনীতি এখনও ‘রাজনীতিক বাণিজ্য’ হিসেবেই অনেক রাজনীতিবিদের কাছে বিবেচিত হয়ে আসছে। যদিও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান রাজনীতিকে জাতীয় স্বার্থসাপেক্ষ করার নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি কখনও চাননি যে, রাজনীতি করে কোনও রাজনীতিবিদ দেশের ও দশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে তাঁর নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করবেন, আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠবেন, সে-জন্য তিনি বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ করেছিলেন। তাঁর রাজনীতি ছিল দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থের রাজনীতি।
আগামী জাতীয় নির্বাচন বর্তমান বিশ্বায়নের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোত। এই নির্বাচন তাই অতীতের যে কোনও নির্বাচনের তুলনায় বিশেষভাবে অধিক তাৎপর্যপূর্ণ। এই নির্বাচনে দেশ পরিচালনার নেতৃত্ব নির্বাচন করার ক্ষেত্রে তাই নির্বাচকদেরকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে ও বিশেষ বিবেচনাবোধ কার্যকর করতে হবে। মনে রাখতে হবে, রোহিঙ্গা সংকট দেশের ঘাড়ে চড়ে বসে আছে। এমন নেতৃত্ব চাই যাঁরা এই রোহিঙ্গা সংকট কাটিয়ে দেশের উন্নয়নের ধারাকে আরও বেগবান ও ফলপ্রসূ করে তুলতে পারবেন। দেশের সাধারণ মানুষকে শোষণ, শাসন ও অধস্তন করে রাখার রাজনীতিকে মানুষ এখন আর পছন্দ করে না। নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের সময় তাই আত্মস্বার্থ চরিতার্থ করার রাজনীতির বিরোধী মনোভাব পোষণকারী রাজনীতিবিদকে মনোনয়ন দিতে হবে। দেশের জন্য নয়, নিজের জন্য যিনি রাজনীতি করেন, তিনি আসলে কোনও রাজনীতিবিদ নন, তিনি একজন রাজনীতিক বণিক মাত্র, তিনি রাজনীতিকে সম্পদ অর্জনের ব্যবসার অধিক কীছু মনে করেন না। এইসব জাতীয় স্বার্থবিরোধী নেতাকে বর্জন করুন। এই জন্য দলীয় অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে আপতত অতিক্রম করা যে-কোনও রাজনীতিক দলের ক্ষেত্রে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। তা না হলে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন বর্তমান রাজনীতিক পরিপ্রেক্ষিতের নিরিখে, মনে রাখতে হবে, জাতীয় স্বার্থ ফলপ্রসূ করার পক্ষে অনুকূল হবে না।