সংবাদ প্রকাশের পর বাতিল হল ‘গোপন নিলাম’। এই বাক্যটিকে যতোই সাধারণ বলে বোধ হোক না কেন আসলে এর মধ্যে একটি অসাধারণত্ব লুকিয়ে আছে। অসাধারণত্বটি এই যে, এই বাক্যের মধ্যে নিলাম গোপন করার একটি দুরভিসন্ধির সন্নিবেশিত আছে, যা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ্যে এসেছে। ‘নিলাম’ সাধারণত এমন একটি পুঁজিবাদী ব্যবসায়িক পদ্ধতি যার মধ্যে একটি পণ্য বিক্রয় করে সর্বোচ্চ মূল্য পাওয়ার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হয়। মুক্তবাজার অর্থনীতির ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ মূল্য পাওয়ার একটি শর্ত এই যে, বাজারে মজুদ করা পণ্যটির ক্রেতার সংখ্যা যতো বেশি হবে প্রতিযোগিতা ততো তীব্র হবে এবং স্বাভাবিকভাবেই পণ্যটির দামও পাওয়া যাবে ততো বেশি। একারণে নিলাম ডাকে যাতে বেশি বেশি ক্রেতা এসে উপস্থিত হয় সেজন্য জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক প্রচার করা হয়ে থাকে। প্রচারের বিপরীত রীতি গোপনীয়তা একেবারেই পরিহার করা হয়। অথচ গত ১৫ আগস্টের দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদ থেকে জানা যায় যে, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পূর্বপাগলা ইউনিয়নের দামোধরতপী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পূর্ব বীরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনের ‘গোপনে ডাকা নিলাম’ বাতিল করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে গোপনে নিলাম বিক্রয়ের খবর পত্রিকায় প্রকাশের পর এবং বাতিল করা হয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে। জানা গেছে, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও দক্ষিণ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার গোপনে নিলাম দেওয়া ভবনের নিলাম বাতিল করে নতুন করে প্রকাশ্যে প্রচারণা চালিয়ে নিলাম ডাকার নির্দেশ দিয়েছেন। এতে করে সরকারকে ঠকানোর প্রাথমিক প্রচেষ্টা অন্তত প্রতিহত হয়েছে। সেজন্য এই দুই কর্তকর্তাকে ধন্যবাদ। তাঁরা প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সঙ্গে নিজেদের পার্থক্য বজায় রাখতে পেরেছেন।
সার্বিক বিবেচনায় দুর্নীতির বিস্তৃতি এতো ব্যাপকাকার ধারণ করেছে যে, তা আর কহতব্য নয়। তার বিবরণ একেবারেই ডালভাত হয়ে গেছে। কেবল বলি, পত্রিকার গোয়েন্দাগিরির উপর নির্ভর না করে এবার থেকে সরকারি প্রশাসনের পক্ষ থেকে এইরূপ সকল প্রকার দুর্নীতির গোপন খবর বের করার কাজে গোয়েন্দাগিরিতে নামতে হবে। অন্যথায় এই দেশে প্রশাসনের শাসন বলে কীছু অবশিষ্ট থাকবে না, জনসাধারণের পক্ষে যেখান থেকে দুর্নীতি ছাড়া আর কীছুই পাওয়ার থাকবে না।