তাহিরপুর থানার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “দুটো ঘটনায় অভিযোগ পাওয়ার পর শনিবার সকালে সরেজমিন তদন্ত করে এসেছেন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এই গতানুগতিক, কিংবা বলা যায়, প্রচলিত রেওয়াজমাফিক এই রকম ভাষ্য ও তদন্তের আশ্বাস প্রদান করা হয় প্রায় সকল সংঘটিত ঘটনার ক্ষেত্রেই। অকুস্থল পরিদর্শন করা এবং আশ্বাসের আশার ধুলোপড়া ছড়িয়ে পরিস্থিতি প্রাথমিক পর্যায়ে শান্ত করার চেষ্টা করা হয়। আসলে ঘটনার শিকার ও শিকারী এবং প্রতিবিধানকারী ইত্যাদি সকল পর্যায়েই প্রথম থেকেই শুরু হয়ে যায় ঘটনাটিকে কোনও না কোনওভাবে কোনও না কোনও মহলের স্বার্থে ব্যবহার বা বিক্রি করার প্রক্রিয়া, যাকে বলে পুঁজিবাদী ব্যবসায়িক নিয়ন্ত্রণ। কোনও ঘটনাই বোধ করি এই প্রক্রিয়া থেকে রক্ষা পায় না। ফলে যৎসামান্য ব্যতিক্রম বাদে কোনও ঘটনারই যথাযথ সুরাহা কিংবা মীমাংসা হতে দেখা যায় না।
এখানে সংবাদ প্রতিবেদনে আদিবাসীদের উপর বিশেষ মহলের কতিপয়ের নির্যাতনের বিষয়টি, যা নিতান্তই ধরা যায় ব্যক্তিগত পর্যায়ের, পরিলক্ষিত হচ্ছে। মানুষে মানুষে ঝগড়াবিবাদ লেগেই থাকে, সেটা স্বাভাবিক। ধরে নেওয়া যায় এখানেও তাই হয়েছে। কিন্তু সেটা যদি অন্যমাত্রা পায় অর্থাৎ নিদেনপক্ষে বলা যায়, দুর্বলের উপর সবলের অন্যায় অত্যাচার হয়ে উঠে তবে প্রশাসনকে অবশ্যই নির্যাতনের যথাযথ প্রতিকার করতে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে, ‘ব্যবস্থা নেওয়া হবে’ এই ঘোষণা দিয়ে স্থবির হয়ে বসে থাকলে চলবে না। আর প্রতিকার প্রত্যাশায় থাকা মানুষকে আশাহত করে প্রসঙ্গটিকে যদি বিচার করা বা প্রতিকার করার অজুহাতে বিলম্বিত করা হয় তা হলেও সেটা ভালো কোনও লক্ষণের সূচনা করবে না।
আশা করি অভিযোগ দুটির ক্ষেত্রে অচিরেই এমন ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যাতে করে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় এবং নির্যাতিতরা যথার্থ অর্থে প্রতিকার লাভ করেন। আদিবাসী নির্যাতন আর না ঘটার নিশ্চয়তা তৈরি করা না গেলে বিষয়টি কোনও পক্ষের জন্যেই মঙ্গল বয়ে আনবে না। মনে রাখতে হবে, ৫০০ টাকা কারও কাছে পাওনা হলে, সে টাকা যথাসময়ে ফেরত না দেওয়ার ‘অপরাধে’ তাকে মারধর করার কোনও অধিকার কোনও পাওনাদারের কখনওই জন্মায় না। এমন সামাজিক রেওয়াজ কিংবা আইন বাংলাদেশে কেন পৃথিবীর কোথাও নেই। স্বাভাবিকভাবে সমাজে প্রচলিত বিচারসালিসির মাধ্যমে এমন সমস্যার সমাধান করা যায়। কিন্তু তা না করে পাওনা টাকা পরিশোধ করার অপারগতার কারণে কাউকে শারীরিকভাবে আঘাত করা, মোটেও সঙ্গত নয়। এতে করে সমাজে অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়।