পত্রিকায় লেখা হয়েছে, “রক্তাক্ত বাচ্চাটিকে বাঁচাতে পার্শ্ববর্তী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।” এই বাচ্চাটি একটি সদ্যপ্রসূত বাচ্চা। তাহিরপুরের দুই হাতুড়ে ডাক্তার মায়ের পেটে থাকাবস্থায় তাকে মৃত ঘোষণা করে এবং মায়ের প্রসবদ্বার ব্লেড দিয়ে কেটে বাচ্চাটিকে বের করার সময় তার মাথাটিকে ব্লেড দিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করে দেয় এবং দ্রুতগতিতে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পথে সে মারা যায়।
প্রশ্ন করা যেতেই পারে, এই মর্মান্তিক মৃত্যুর জন্য দায়ী কে? এই শিশুটি কে হত্যা করলো? ডাক্তাররা তো তাকে বাঁচাতে পারেনি, বরং বলা যায়, হত্যা করে ফেলেছে। তারপর প্রশ্ন উঠতে পারে, আমাদের দেশে যে-গ্রাম্য ডাক্তার শ্রেণি তৈরি করা হয়েছে সে-শ্রেণিটির চিকিৎসা করার কোনো সীমা নির্ধারণ করা আছে কি? না কি সে শ্রেণিটির এইরূপ জটিল অপারেশন ব্লেড দিয়ে করে ফেলার আইনি অনুমোদন আছে এবং ব্লেড কি একটি প্রসব-অপারেশনের যন্ত্র হতে পারে? যদি এইগুলোর প্রশ্নের উত্তর ইতিবাচক না হয় তবে এই দুই ডাক্তারের কেন প্রসূতিকে উচ্চতর চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করার সুমতি হলো না? তারা কি এই শিশুমৃত্যুর দায় গ্রহণ করবেন?
গ্রামের সরল মানুষকে এখনও যে-কোনও জটিল বিষয়ে মূলো বুঝ দিয়ে বুঝানো যায়। মুফতে কটি টাকা উপার্জনের লোভে গ্রামের দুই ডাক্তার একটি প্রসবোদ্যত শিশুকে আক্ষরিক অর্থেই ব্লেড দিয়ে কেটে ক্ষত-বিক্ষত করে মেরে ফেলেছেন। তারা এই অপারেশনের ভার না নিলেও পারতেন এবং সেটাই তাদের ক্ষেত্রে মঙ্গলজনক হতো, এমন একটা মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটতো না।
দেশে যেন কেউ কোথাও কোনও নিয়ম কিংবা আইন মানছে না। গ্রাম্য ডাক্তাররাই বা মানবে কেন? তারাও তাদের অধিকারের মাত্রা অতিক্রম করবেনই। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সকলেই বলছেন এমনটি চলতে পারে না। আমরা আশা করছি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এমন মর্মান্তিক মৃত্যু যাতে আর না ঘটে তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।