1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
সোমবার, ০৫ মে ২০২৫, ০৮:০১ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

জননেতা আয়ূব বখত জগলুল : স্মৃতির মণিকোঠায় তুমি অমর

  • আপডেট সময় শনিবার, ১১ আগস্ট, ২০১৮

ম ফ র ফোরকান ::
(পূর্ব প্রকাশের পর)
মেয়র জগলুল যে পৌরসভায় তাঁর মায়ের জন্ম নিবন্ধনের জন্য টাকাটি আদায় হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হয়ে সনদপত্রে স্বাক্ষর করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন সেই একই পৌরসভায় তাঁর পূর্বাধিকারী চেয়ারম্যান ও ভারপ্রাপ্ত মেয়রের সময়ে সংঘটিত হয়ে গেছে অবাধ হরিলুট। আমার ধারণা, দেড়যুগে জালালাবাদ নামক বেকারিকে অফিস ও বাসায় নাস্তা সরবরাহ বাবত যে বিল দেওয়া হয়েছিল তার যোগফলটা যদি জগলুর সামনে ধরা হতো তবে তিনি হয়তো হৃদরোগে আক্রান্ত হতেন। একটি বেসরকারি অডিট টিম দিয়ে আদর্শ শিশু শিক্ষা নিকেতনের অডিট করিয়েই জগলুর সাধ পূরণ হয়ে গিয়েছিল। সেখানেই পাওয়া গিয়েছিল অবিশ্বাস্য সব কর্মকা-। আর পৌরসভায় অডিট করানো গেলে কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে যে বেরিয়ে আসতো বড় বড় সব অজগর তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
পৌরসভায় অডিট করানোর কোনো সামর্থ ছিল না তখন এ প্রতিষ্ঠানটির। অডিট টিমের বিল পরিশোধের মত টাকা তহবিলে না থাকায় জগলুর পক্ষে হাঁটা সম্ভব হয়ে উঠেনি। তাঁর দেওয়া আশ্বাসটি দীর্ঘশ্বাস হয়েই রয়ে গেল শেষ পর্যন্ত। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ওই কাজটিতে হাত দেওয়া সম্ভব হয়ে উঠেনি তাঁর। অডিটটা স¤পন্ন হলে অন্যান্য বহু তথ্যের সঙ্গে সততার প্রতীক নাম ধারণকারী ব্যক্তির বাড়ির নাস্তার খরচের বিল ও রুমে রুমে লাগানো বাল্বের খরচের হিসাবটা পেলেই আক্কেল গুড়–ম হতো সুনামগঞ্জবাসীর। আর গাড়ির তেল খরচের বিল যে গগনচুম্বি হতো তাতে কোন সন্দেহ নেই- অন্তত আমার মতে। যে ব্যক্তি ঘনঘন শ্বশুর বাড়ি যেতেন পৌরসভার গাড়িতে চড়ে, আইন মোতাবেক মন্ত্রণালয়ের অনুমতি এবং তেল খরচ নিতেন প্রকৃত খরচের বহু গুণ বাড়িয়ে সেক্ষেত্রে খরচের যোগফলটা যে গগনচুম্বি হবেই।
অবিশ্বাস্য হলেও মোটেও অসত্য নয় যে কথিত জননন্দিত জনপ্রতিনিধির আমলে পৌরসভার গাড়ির কোন লগ বই ছিল না। তৎকালীন দুর্নীতি দমন বিভাগে এ ব্যাপারে আমি একবার অভিযোগ করেছিলাম। তার পরিপ্রেক্ষিতে মাসকয়েকের একটি লগ বই তৈরি হয়েছিল জরুরিভিত্তিতে। দুর্নীতি দমন বিভাগে হাতে যাওয়ার পর এ বইয়ের একটি ফটোকপি পাই আমি। এ লগ বইয়ে তেল খরচের বিবরণ রয়েছে তা যিনি দেখবেন তার কাছে ‘স্বঘোষিত সৎ’ ব্যক্তির সততার পারদ তলানিতে পতিত হবে। এখানে যে তথ্য মিলে তা দেখলে যে কোন ব্যক্তির মনে প্রশ্ন জাগা অসম্ভব নয় যে, এই যদি হয় একজন ‘স্বচ্ছ’ ব্যক্তির অবস্থা, তা হলে প্রকৃত স্বচ্ছ ব্যক্তিত্বের অধিকারীদের জন্য তো নতুন শব্দ চয়ন আবশ্যক। লগ বইয়ে উল্লেখিত কা-কারখানা দেখে যেকোন ব্যক্তির চোখ ছানাবড়া হয়ে যাবে, এ দাবি করতে পারি আমি নিশ্চিতভাবে।
বললে কত কথাই তো বলার আছে। সুনামগঞ্জ পৌর এলাকায় এক সময় ছিল কয়েক শ’ নলকূপ। প্রায় প্রতিটি নলকূপই ছিল লোহার পাইপের। এগুলো স্থাপনকালে আবিষ্কৃত হয়নি প্লাস্টিক পাইপ। সুনামগঞ্জের বর্তমান পানি সরবরাহ প্রকল্পটি চালু হলে পৌরসভা টেন্ডার দিয়ে অর্থাৎ তহবিলের টাকা খরচ করে নলকূপগুলো উত্তোলন করে। উত্তোলিত শত শত নলকূপের হাজার হাজার পাইপ ও এর মাথা পৌরসভার গুদামে সুরক্ষিত থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দুঃখের সঙ্গেই বলতে হচ্ছে, মেয়র জগলুল দায়িত্বে এসে হাজার হাজার পাইপ, শত শত নলকূপের মাথা তো দূরের কথা এক ইঞ্চি পাইপ বা একটি নলকূপের ভাঙ্গা মাথার অস্তিত্ব আবিষ্কার করারও ভাগ্য হয়নি তাঁর। বিস্ময়ে হতবাক না হয়ে জোঁ নেই যে, উল্লিখিত নলকূপের মাথা ও পাইপ চোরাই পথে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল বিগত সময়ে। আর সেই প্রায় দেড় যুগ সময়কালে ফিটকারী ও ব্লিচিং পাউডারের বাস্তবে নয় শুধুমাত্র কাগজী সরবরাহের পাশাপাশি নলকূপ সামগ্রী কালোবাজারে বিক্রির সুযোগের সদ্ব্যবহার করেই জিরো থেকে হিরো হয়েছিল পা চাটা সাংবাদিক নামের কয়েকজন চামচা।
আমার এক ভাতিজাকে আদর্শ শিশু শিক্ষা নিকেতনে আনা-নেওয়া করছিলাম কয়েক মাস। সে প্রায় দেড় বছর আগের কথা। হঠাৎ দেখি বিদ্যালয়ে পাশাপাশি দুটি সাইন বোর্ড। একটির সঙ্গে আরেকটির মিল নেই। দেয়ালের রঙ উঠে যাওয়ায় ভেসে উঠেছে বেআইনিভাবে নামকরণকৃত ‘মমিনুল মউজদীন আদর্শ শিশু শিক্ষা নিকেতন’। এর নিচেই জ্বলজ্বল করছে বৈধ, আইনসম্মত এবং পুরনো নামটি ‘আদর্শ শিশু শিক্ষা নিকেতন’ লেখা সাইনবোর্ড।
চাঁদে সাঈদীর মুখ দেখা দেওয়ার গল্পটি মনে মনে পড়ে যাওয়ায় হাসি আর ধরে রাখতে পারলাম না। অকস্মাৎ হেসে উঠায় কে কি মনে করছে, এ ভাবনা থেকে সরে গেলাম কিছুটা। তারপর মোবাইল ফোনে কল দিলাম মেয়র জগলুলকে। এক প্রতিষ্ঠানের দুই নাম রাখলে কিভাবে, আমার রসিকতাপূর্ণ এ প্রশ্নে বিস্ময় প্রকাশ করলেন তিনি। আমি বললাম তুমি নিজে এসে দেখে যাও আজব এ কা-। বললেন, আজ দেখতে হবে না। ব্যবস্থা হবে। দুদিন পর এক বৃহ¯পতিবারে রঙমিস্ত্রিরা কাজে হাত দিলে প্রকৃত নাম অর্থাৎ ‘আদর্শ শিশু শিক্ষা নিকেতন’ লেখা বোর্ডটি ঝলমল করতে থাকে। এবং তা এখনও বহাল তবিয়তে থেকে ‘সবার উপরে যে আইন’- এ কথাটিরই সত্যতার প্রমাণ ঘোষণা করে যাচ্ছে।
জবর দখল হয়ে যাওয়া প্রায় কোটি টাকা মূল্যের ভূমি উদ্ধারে মামলা করলো সুনামগঞ্জ পৌরসভা। রায়ও পেল। সেও হয়ে গেল ২০ বছর প্রায়। কিন্তু ভূমি আর পৌরসভার দখলে আসেনি। স্থানটি শহরের একেবারে প্রাণকেন্দ্র। ষোলঘর। মহিলা সমিতি বা সুরমা ক্লিনিকের বিপরীতে বিশাল যে লন্ডনি বাড়িটি রয়েছে তার দেয়ালের ভেতরেই রয়েছে আদালতের রায়ে পাওয়া পৌরভূমির অবস্থান। আদালতের রায়ের কিছুদিনের মধ্যেই এসেছিল পৌর নির্বাচন। জগলুর বিরুদ্ধে নির্বাচনী যুদ্ধে যোগান দেওয়া মোটা অংকের চাঁদা প্যারালাইসড করে দেয় তথাকথিত ‘সততার প্রতীক’ জনপ্রতিনিধি। লন্ডন সফরে গিয়ে বার কয়েক ওই বাড়ির আতিথেয়তা ও রসনায় নাকি তৃপ্ত হয়ে এসেছিলেন তিনি। তাই আদালতের রায় পাওয়ার পরও ভূমি উদ্ধারে নীরবতা পালন করে যেতে হয় তাকে।
কথায় আছে না, ‘উড়ো খই গোবিন্দই নম’! কথিত জননন্দিত ব্যক্তির কাছে কাছে পৌর স¤পত্তি তো উড়ো খই-ই। গোবিন্দ পদতলে অর্পণে বিপত্তির তো প্রশ্নই উঠে না। পরিষদে এমন ব্যক্তিদেরই আনা হয়েছিলো পাস করিয়ে- যারা চলবে তার আঙুলের ইশারায়। সুতরাং ‘নো চিন্তা ডো ফূর্তি’।
এভাবে পৌর স¤পত্তি বেআইনিভাবে উপঢৌকন দিয়ে কিংবা ব্যক্তি মালিকানার ভূমির ওপর দিয়ে নি¤œমানের ড্রেন তৈরি করে জগলুর পকেট ভোট হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি মহল্লাকে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত করে নেন তৎকালীন দায়িত্বশীল ব্যক্তি। এভাবেই নির্বাচনে বিরোধিতাকারীদের চরম শিক্ষা দিয়ে গেছেন দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের কথিত সেনাপতি। এই মহল্লাটি চিনেন সুনামগঞ্জ শহরবাসী। সবারই এ মহল্লাকে চিনে ‘দাসপাড়া’ হিসেবে। ব্যক্তি মালিকানার ভূমির ওপর দিয়ে পৌরসভা ড্রেন তৈরি করতে পারে কিভাবে, স্ল্যাবহীন নি¤œমানের ড্রেন তৈরি করে একটি সুন্দর, সাজানো গোছানো মহল্লাকে ইচ্ছে করেই একজন জনপ্রতিনিধি কিভাবে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত করে ফেলতে পারেন, উল্লিখিত মহল্লাটি এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ভোট ব্যাংক হওয়ার আক্রোশের পাশাপাশি এখানেও রয়েছে লন্ডন সফরের আতিথেয়তার ফজিলত। এ মহল্লারই একজন আছেন লন্ডন প্রবাসী। তার আতিথেয়তা গ্রহণ, রসনা তৃপ্তি কি ভুলা যায় এত সহজে? চক্ষু লজ্জায় পড়ে হলেও, তাকে কি কিছুটা সুবিধা না দিয়ে পারা যায়? তিনি যে আবার ‘ন্যায়েরও প্রতীক’! আতিথেয়তা বলে কথা! এটা ভুলে যাওয়া কি চলে? ড্রেন নির্মাণ কিংবা সংস্কার খাতে কোন বরাদ্দ না পাওয়ায় জগলুর পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠেনি ঐ মহল্লাবাসীকে নারকীয় যন্ত্রণা থেকে পরিত্রাণ দিয়ে যাওয়া। টিএলসিসি’র প্রতিটি সভায় প্রতিশ্রুতির পর প্রতিশ্রুতিই দিয়ে গেছেন জগলু। কারণ ড্রেন নির্মাণ খাতে বরাদ্দশূন্য জগলু এক্ষেত্রে ছিলেন যে একেবারেই অসহায়। আগামীতে এ দুর্বিষহ যন্ত্রণা থেকে মহল্লাবাসী পরিত্রাণ পাবে- এই আশায় বুক বেঁধে আছেন সবাই। (চলবে)

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com