গত মঙ্গলবার (২৪ জুলাই) জেলা প্রশাসক সম্মেলনের প্রথম দিন ছিল। এমন সম্মেলন হওয়াটা নতুন কোনও ঘটনা নয়। আগেও এমন সম্মেলন হয়েছে। জানা কথা, জেলা প্রশাসন দেশের শাসন ব্যবস্থার বিস্তারকে কার্যকর কিংবা বলা যায় সচল করে রাখে। শাসন পরিচালনায় প্রকৃতপ্রস্তাবে এর কোনও বিকল্প নেই এবং বোধ করি আর হবেও না। তাই প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এর একটি কার্যকর সম্পর্কের অনিবার্যতাকে অস্বীকার করা যায় না, কোনওভাবেই।
বাংলাদেশ বর্তমানে একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। বিশ্বদরবারে এই দেশ গরিব দেশের তকমা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে মধ্য আয়ের দেশের প্রতীক ছিনিয়ে নিয়েছে, ইতোমধ্যে। ‘ছিনিয়ে নিয়েছে’ বলছি এ জন্যে যে, গরিবির বিরুদ্ধে সংগ্রামে বাংলাদেশকে দেশি-বিদেশি শত্রুর ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত প্রতিহত করে এই পর্যায়ে উত্তীর্ণ হতে হয়েছে, হলোই বা তা মুনাফামুখি মুক্তবাজার অর্থনীতির পরিসরে। জাতিকে ভুলে গেলে চলবে না যে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই দেশে একদিন সমাজতান্ত্রিক আর্থব্যবস্থা চালু করতে চেয়েছিলেন, আর এই কারণে দেশি-বিদেশি শত্রুরা তাঁকে সপরিবারে হত্যা করেছিল এবং সেই সঙ্গে প্রতিহত করে দিয়েছিল দেশের অপুঁজিবাদী বিকাশের পথ, কেবল তাই নয়, প্রকৃতপ্রস্তাবে বাংলাদেশ যাতে চিরদিনের জন্য একটি ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’তে পরিণত হতে পারে তার পথ পরিষ্কার করে দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী সকল রাজনীতিক কার্যক্রম মূলত দেশকে গরিব করে রাখার একটি সফল কার্যক্রম মাত্র। শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও সফল নেতৃত্ব দেশকে গরিবির গহ্বর থেকে টেনে তোলে এনে উন্নয়নের রাজপথে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বলছে, বাংলাদেশের জন্য সবদিক থেকে বৈরী বর্তমান বিশ্বায়নের পরিপ্রেক্ষিতে সা¤্রাজ্যবাদী বিরোধিতাকে মোকাবেলা করে এই উন্নয়ন অর্জন করা চাট্টিখানি কথা নয়, যখন বাংলাদেশের উন্নয়নকে ঠেকিয়ে দিতে ইতোমধ্যে সা¤্রাজ্যবাদী শক্তি বাংলাদেশের ঘাড়ে রোহিঙ্গাসঙ্কটকে চাপিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। একদিকে এমন সঙ্কটশঙ্কুলতা, অপরদিকে অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের জটিল পরিস্থিতি ও সেই সঙ্গে আসন্ন সংসদীয় নির্বাচনের তোড়জোড় সবকীছু মিলে দেশের জন্যে এই সম্মেলন বিশেষ তাৎপর্যবহ ও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৩ দফা নির্দেশনা প্রদান করেছেন। সম্মেলনে উপস্থিত জেলা প্রশাসকদেরকে তিনি চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক নির্মূল, যুবক সম্প্রদায়কে মাদক থেকে রক্ষা, সরকারি সেবাপ্রাপ্তি নির্বিঘœকরণ, স্থানীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ নিশ্চিতকরণ, শিল্পাঞ্চলে শান্তিরক্ষা, পণ্য পরিবহন ও আমদানি নির্বিঘœকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন-বিকাশ ত্বরান্বিতকরণ, তৃণমূল পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, ঝরেপড়া শিশুশিক্ষার্থীদের শিক্ষার মূলধারায় ফিরিয়ে আনা এবং পেশিশক্তি, সা¤্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস নির্মূল করে দেশের ভেতরে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। আপাতত আর কীছু না বলে আমরা আশা করতেই পারি যে, দেশের প্রতিটি জেলায় এই কার্যক্রম সুষ্ঠুরূপে পালিত হবে। জানি প্রধানমন্ত্রীর এসব নির্দেশনা যথাযথভাবে কার্যকর হলে দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার পথে আর কোনও প্রতিবন্ধকতা থাকবে না।