গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদশিরোনাম ছিল, “গ্রামবাসীর চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান”। সম্পত্তিতে ব্যক্তিগত মালিকানাভিত্তিক সমাজে এমনটি হতেই পারে। পত্রিকায় লেখা হয়েছে যে, জগন্নাথপুরে গ্রামবাসীর চলাচলের একমাত্র রাস্তা সাবেক চেয়ারম্যান মজলুল হক বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন এবং এতে করে গ্রামবাসী বলতে গেলে একরকম অবরুদ্ধই হয়ে পড়েছেন। ইতোমধ্যে জগন্নাথপুর থানা পুলিশ ও তহশিল অফিসের কর্মকর্তারা অকুস্থল পরিদর্শন করেছেন। সাবেক চেয়ারম্যান সাহেব দাবি করেছেন, রাস্তার স্থানটি তাঁর ব্যক্তিমালিকানাধীন ভূমিসীমার ভেতরে পড়েছে। আর গ্রামের সাধারণ মানুষ দাবি করছেন, রাস্তার জায়গাটি সরকারি মালিকানাধীন। বুঝাই যায় রাস্তাটি ছিল এবং রাস্তার জায়গাটিতে কোনও ব্যক্তিমালিকানা প্রতিষ্ঠিত নেই। হঠাৎ করেই একটা ব্যক্তিমালিকানা গজিয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। চেয়ারম্যান সাহেব এতাদিন তাঁর নিজের সম্পদ সম্পর্কে বেখবর ছিলেন, হঠাৎ করেই তাঁর মনে হয়েছে এই রাস্তার জায়গাটি তাঁর ব্যক্তিগত সম্পত্তির অংশ। কিংবা এমন হতে পারে যে, এই রাস্তাটি দখল করার প্রস্তুতি তিনি নিচ্ছিলেন এবং এতোদিন তলে তলে প্রচেষ্টা চালিয়ে হয় তো কাগজপত্র তৈরি করেছেন। বাংলাদেশে ভূমিব্যবস্থার দুর্বলতা ও তার মধ্যে কম করে হলেও দাপ্তরিক অনিয়ম-দুর্নীতি থাকার কারণে এমনটা হয়, হঠাৎ করেই কী এক জাদুতে মাঝে মাঝেই একজন অন্যজনের ভূসম্পত্তির মালিক বনে যায় এবং শুরু হয় ঝগড়া-ফ্যাসাদ। এখানে সরকারি জমির মালিক বনে গেছেন একজন সাবেক চেয়ারম্যান এবং গ্রামবাসীর চলাচলের রাস্তা তিনি দখল করে নিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই এখন জনমনে প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে রাস্তাটি আসলে কার? প্রশাসনিক পর্যায়ে অভিযোগ করে কোনও ফলোদয় হচ্ছে না। মালিক হতে পারেন চেয়ারম্যান সাহেব, সে-সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অথবা মালিক হতে পারেন সরকার। এমতাবস্থায় রাস্তাটির প্রকৃত মালিক কে তার সুরাহা হওয়া জরুরি। তা না হলে গ্রামবাসীর স্বাধীনভাবে চলাচলের মৌলিক অধিকারটি লঙ্ঘিত হবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। দেশের কোনও নাগরিক তাঁর মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকবেন এটা হতে পারে না।
আশা করি অচিরেই রাস্তাটির মালিক কে যথাযথ কর্তৃপক্ষ সে সম্পর্কে সর্বাগ্রে সুনিশ্চিত হবেন। মালিকানা নির্ধারণের পর, যদি প্রমাণ হয় রাস্তাটি চেয়ারম্যান সাহেব সত্যিকার অর্থেই জরবদখল করেছেন, তবে কথা থাকে যে, রাস্তা জবর দখলের প্রচেষ্টা চালিয়ে সাধারণ মানুষকে নাজেহাল করার জন্য তাঁর আইনানুগ শাস্তি যেনো সুনিশ্চিত হয়।