১৯৭১-এ এই দেশের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি। গত সাড়ে চার দশকে বেড়ে হয়ে গেছে বোধ করি ১৬ কোটির বেশি। কারণ সরকারি মতে যে হিসেবটা লোকসমাজে প্রচারিত হয় সেটা প্রচারিত হওয়ার দিন থেকেই বাড়তে থাকে। সেটা আর ঠিক থাকে না।
গতকালের এক পত্রিকায় পড়লাম, বাংলাদেশে ১০, ২০, ৩০ এমনকি ৪০ বছর ধরে সরকারি চাল বা অন্য কোনও মাল এক গুদাম থেকে অন্য গুদামে যেতে যেতে পথেই থেকে যায়, অন্য গুদামে আর যায় না এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এই চালানকে ‘চলাচলে আছে’ বলে হিসাবের খাতাপত্রে লিখে দিয়ে চালিয়ে নেন দশকের পর দশক। চমৎকার দীর্ঘসূত্রিতা।
গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল, “হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয় : আড়াই বছরেও শুরু হয়নি কার্যক্রম”। বাংলাদেশে এমন হতেই পারে। প্রচলিত প্রথানুসারে এটাকে বিলম্ব বলা যাবে না, যেখানে ৪০ বছরকেই বিলম্ব বলে গণ্য করা হয় না। এর জন্য আক্ষেপ করার কোনও মানে হয় না। তবে সতর্ক হতে হবে এবং যথাস্থানে প্রতিরোধ গড়ে তোলতে হবে। বিশেষ করে সতর্ক হতে হবে রাষ্ট্রচালক রাজনীতিবিদদের। তাঁরা যদি করিবকর্মাদের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন তবে তো বিষয়টা দাঁড়াবে, কাকস্য পরিবেদনা। আসলে আটকে থাকা কাজগুলো সচল করতে হবে। এই সংবাদপ্রতিবেদনেই উল্লেখ আছে, হাওর উন্নয়ন বোর্ড গঠনের বিষয়টি বঙ্গবন্ধু নির্দেশিত একটি পুরনো প্রকল্প। হিসেব মতো কম করে হলেও চার দশক আটকে রাখা হয়েছিল ইচ্ছে করেই, যাতে দেশের উন্নয়নকে পিছিয়ে দিয়ে হাওরাঞ্চলের সাধারণ মানুষকে আরও অন্তত কীছু দিন পায়ের তলে ফেলে পিষ্ট করে শাসন ও শোষণ করা যায়। যা বঙ্গবন্ধু চাইতেন না এবং চান না বঙ্গবন্ধুতনয়া শেখ হাসিনাও।
বর্তমান সরকার কৃষকবান্ধব সরকার, সর্বার্থে জনগণের কল্যাণকামী সরকার। পরিকল্পিত উন্নয়নমূলক কাজকে স্থগিত রেখে, উন্নয়নকে পিছিয়ে দিয়ে, প্রচলিত দীর্ঘসূত্রিতার ফেরে ফেলে, জনগণের কাছে সরকারকে অপ্রিয় করে তোলার ষড়যন্ত্রকে রুখে দিতে হবে। সংশ্লিষ্টদের কোনও পরামর্শ দেওয়ার ধৃষ্টতা দেখানোর কোনও মানে হয় না। কেবল বলি, জাতির জনকের স্বপ্নপূরণে সচেষ্ট হোন।