গতকাল শনিবার, সুনামগঞ্জের পঞ্চগুণীকে সম্মাননা প্রদান করা হলো জেলা শিল্পকলা একাডেমি সুনামগঞ্জের পক্ষ থেকে। সেখানে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান কবি ড. মোহাম্মদ সাদিক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে সুনামগঞ্জের মহাকবি সঞ্জয়কে স্মরণ করেছেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত জেলা প্রশাসককে তিনি অনুরোধ করেছেন লাউড়েরগড়ে মহাকবি সঞ্জয়ের নামে একটি স্তম্ভ নির্মাণের এবং বলেছেন, ‘যে জাতি তার সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে চিনে না সে জাতি টিকে থাকতে পারে না।’ অর্থাৎ কবি কথিত এই ‘যে জাতি’ হলো সেই জাতি, যে জাতি তার জাতিগত আত্মপরিচয় থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে তোলে, সা¤্রাজ্যবাদী স্বার্থের দাসত্বকে বরণ করে নেয়। কিন্তু বলে রাখা জরুরি যে, কথিত এই জাতি বাঙালি জাতি নয়। বাংলাদেশে দেশের খেয়ে দেশের পরে বিদেশের সেবা করে এমন স্বভাবের কীছু লোক সবসময়ই ছিল এবং এখনও আছে, তারা দেশের ও জাতির সংস্কৃতির সেবা করে না, মহাকবি সঞ্জয়কে ভুলে থাকে।
এই দিক থেকে বিবেচনায়, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতিক সংস্কৃতি এখনও বিচ্ছিন্নতাবাদিতায় আক্রান্ত বলে ধারণা করা হয়। স্মার্তব্য যে, বাঙালিকে পাকিস্তানি করার চেষ্টা করা হয়েছে, বাংলাদেশি বানানোর প্রচেষ্টা এখনও থামেনি। ভুলে গেলে চলবে না, এই প্রচেষ্টার বশবর্তী হয়ে রাষ্ট্রস্থপতি, জাতির পিতাকে পর্যন্ত হত্যা করা হয়েছিল। এইরূপ একটি রাজনীতিক সাংস্কৃতিক আবহে মহাকবি সঞ্জয়কে ভুলে থাকার মওকা তৈরি হয়ে থেকেছে সেই ১৯৪৭-য়ের দেশভাগের পর থেকেই।
এখন বঙ্গবন্ধুতনয়া শেখ হাসিনা দেশের কর্ণধার। ইতোমধ্যে সঞ্জয়কে স্মরণে প্রতিকূলতা অপসারিত হয়েছে অনেকটাই। আমরা সেজন্য আনন্দিত। কবি সাদিককে ধন্যবাদ, তিনি লাউড়েরগড়ে সঞ্জয়ের একটি স্তম্ভ নির্মাণের প্রস্তাব করেছেন। আশা করি স্তম্ভনির্মাণ অচিরেই বাস্তবায়িত হবে।
এই অবসরে আর একটি বিষয় এখানে উল্লেখ করতে চাই। লাউড়েরগড়ে ভারতবর্ষের একতীর্থে সর্বতীর্থের পুণ্যার্জনের তীর্থ পণাতীর্থের অবস্থান। এই তীর্থটিকে বিশ্ববাসীর কাছে ব্যবহারের জন্য সুযোগ করে দিলে বাংলাদেশের আর্থিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে বলে আমাদের ধারণা। মহাকবি সঞ্জয়ের জন্মভূমি লাউড়েরগড় একটি মহাতীর্থক্ষেত্র। এই সত্যকে ভুলে থাকার অর্থ হলো, হাতের কাছে একটি উন্মুক্ত স্বর্ণখনি থাকা সত্ত্বেও স্বর্ণ আহরণ না করার বোকামিতে বিভোর থাকা।