পরিবহণ খাতে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত করতে হবে
গতকালের সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল ‘নিরাপদ সড়কের দাবিতে মানববন্ধন’। পাশাপাশি আর একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল, ‘অবৈধ যানের বিরুদ্ধে দানা বাঁধছে আন্দোলন’। সংবাদ দু’টির উৎসস্থল ঘুরেফিরে একটাই। লেগুনার ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়েছেন দৈনিক সমকাল, এটিএন বাংলার সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি ও দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরের সম্পদক পঙ্কজ কান্তি দে। বর্তমানে তিনি ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এই ঘটনা সুনামগঞ্জকে বিশেষভাবে আলোড়িত করেছে। আসলে সুনামগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়া বা প্রাণহানি নতুন কোনও ঘটনা নয়। প্রায়ই এমন ঘটনার সংবাদ পত্রিকায় পড়তে ও টিভিতে শুনতে-দেখতে মানুষ এখন যন্ত্রের মতো অভ্যস্ত হয়ে গেছে।
নিরাপদ সড়কের দাবি বাংলাদেশে দাবি পর্যন্তই থাকবে যতদিন পর্যন্ত সড়কের উপর পরিবহণ ব্যবসায়ীদের বেপরোয়া স্বৈরতান্ত্রিকতার অবসান না হবে। বাংলাদেশে রেলপথের বিস্তারকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে থামিয়ে দিয়ে সড়ক পথের ব্যাপক বিস্তার ও উন্নয়ন ঘটিয়ে পরিবহণ ব্যবস্থাকে রাষ্ট্রীয় খাত হিসেবে গড়ে না তোলে ব্যক্তি মালিকানার খাতে ছেড়ে দেওয়ার ফলে বর্তমানে পরিবহণ ব্যবস্থায় যে-অব্যবস্থার সৃষ্টি হয়েছে সেটার একটি উপসর্গ হলো সড়ক দুর্ঘটনার ব্যাপকতা। এমনকি ব্যক্তি মালিকানাধীন এই পরিবহণ ব্যবস্থা এমন দানবিক পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে যে, এই ব্যবস্থা এখন রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের ঊর্ধ্বে অবস্থান করছে।
এই নাজুক অবস্থাকে কাটাতে হলে পরিবহণ খাতে সরকারের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে, সরকারি মালিকানার বাস নামাতে হবে সড়কে এবং রেলপথের বিস্তার ঘটাতে হবে দেশের সর্বত্র। ব্যক্তি মালিকানার পাশাপাশি সরকারি মালিকানার মিথষ্ক্রিয়া পরিবহণ ব্যবস্থায় একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে, যাতে করে ট্রাফিক আইনের প্রয়োগকে অধিকতর কার্যকর করে তোলা সহজ হবে, এখন যা বলতে গেলে একেবারেই অসম্ভব। বর্তমান অবস্থায় একজন সাধারণ হ্যান্ডিম্যানের দৌরাত্ম্যের প্রতিকার চাওয়ার প্রতিবাদে সারাদেশের যানবাহনের চাকা বন্ধ করে দিয়ে দেশকে জিম্মি করে তোলা হয়, সে-ক্ষেত্রে ন্যায়-অন্যায়ের কোনও বিবেচনা প্রাধান্য পায় না। এদিক থেকে বিবেচনায়, অন্য যে-কোনও দেশের তুলনায় বাংলাদেশের পরিবহণ খাতকে সেবামূলক খাতের মর্যাদা দেওয়া যায় না।
বর্তমান পরিবহণ ব্যবস্থার আওতায় সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে, ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়োগ ব্যতীত আপাতত কোনও বিকল্প নেই। ট্রাফিক আইন কার্যকর হলে প্রশিক্ষণহীন, লাইসেন্সহীন, অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকেরা যানবাহনে চালকের আসনে বসতেই পারবে না। অভিযোগ আছে : লাইসেন্সবিহীন অসংখ্য লেগুনা ও ইজিবাইক সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এবং ট্রাফিক আইনের কোনও পরোয়া না করেই। এমতাবস্থায় প্রশ্ন থেকে যায় সড়কের জন্য প্রযোজ্য আইন তখন সক্রিয় হয় না কেন? আইন সক্রিয় হলেই তো অদক্ষ চালকরা চালক হিসেবে রাস্তায় যান নিয়ে নামতে পারবে না এবং প্রকারান্তরে অর্ধেক সড়ক দুর্ঘটনা কমে যাবে। তারপরও কথা থেকে যায়, সরকারের সদিচ্ছা কার্যকর না হলে কীছুই হবে না, দুর্ঘটনা ক্রমাগত বাড়বে। রাষ্ট্রকে পরিবহণ খাতের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিতে হবে এবং সড়কে সার্বিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।