প্রচলিত একটি কথা আছে : সম্পদ সংস্কৃতির স্রষ্টা, সামাজিক ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক। সম্পদই কিংবা সম্পদের মালিকানার রূপভেদই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে যে-কোনও আর্থসামাজিক ব্যবস্থাকে। রাষ্ট্রের একজন শীর্ষ ব্যক্তি থেকে একজন ভিক্ষুক পর্যন্ত সকল মানুষই সম্পদের রূপভেদের নিরিখে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করে থাকেন এবং তাঁদের যাবতীয় কাজকর্ম নিয়ন্ত্রিত হয়। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই এই সম্পদের মালিকানা লাভের লোভ থেকে বেরিয়ে আসা কর্মকা- প্রকারান্তরে দুর্বিষহ করে তুলেছে দোয়ারাবাজার উপজেলার মান্নারগাঁও উইনিয়নের গোপালপুর গ্রামের প্রয়াত সাংবাদিক মঈন উদ্দিনের কনিষ্ঠকন্যার জীবন। ৩১ মে ২০১৮ তারিখে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবরে এক অভিযোগপত্রে তিনি লিখেছেন, “আমরা চার বোন, আমাদের কোনো ভাই নেই, মা-বাবাও নেই। আমার স্বামী প্রবাসে থাকেন। আমি আমার বাবার বাড়িতে অবস্থান করি। আমাদের বসতবাড়ি সংলগ্ন আবদুর রউফ-এর পুত্র আইনুল হক (২৬), কলিম উদ্দিন (১৮) এবং প্রতিবেশী মৃত আব্দুল জব্বারের পুত্র জালাল উদ্দিন দীর্ঘকাল থেকে আমাকে উত্ত্যক্ত করে আসছে। নানাভাবে তারা আমাকে কুপ্রস্তাব দিচ্ছে। তাদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আমাকে রাস্তাঘাটে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্নভাবে অপমান করছে। আমার চলাফেরার রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। বখাটেদের হুমকি-ধমকিতে আমি অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি।” সহজেই অনুমেয় যে, মেয়েটির জীবনে সকল বিপন্নতার একমাত্র উৎস তাঁর বাবার বসত ভিটাটি। এই ভিটাটির দখল চায় কথিত ‘বসতবাড়ি সংলগ্ন’ প্রতিবেশী। বতসবাড়ি দখল প্রত্যাশী প্রতিবেশী ভাড়া করেছে গ্রামের বখাটেদের, হাত করেছে গ্রামের মাতব্বর ও অন্যান্যদের। লোভী প্রতিবেশী বাড়ি চায়। বখাটে প্রোষিতভর্তৃকার শরীর চায়। মাতব্বররা বিচারে বসে রায় দেয় : মেয়ের চরিত্র ভাল না গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দাও। তদন্তকর্মকর্তা কোনও প্রতিকারের ধার না ধেরে উল্টো চোখ রাঙিয়ে যায়। এসবের পেছনেও সম্পদের অর্থাৎ আদি অকৃত্রিম অর্থের খেলা। সেই ‘টাকা গোল, টাকা বাজায় গ-গোল’। বাবার বসতবাড়িটাই মেয়েটির গলার কাঁটা। অর্থাৎ তাঁর জীবনে সম্পদ বিপদ হয়ে দেখা দিয়েছে।
প্রতিকার প্রত্যাশী অসহায় এই নারী জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে তাঁকে রক্ষার আবেদন করেছেন, গত ৩১ মে ২০১৮ তারিখে। তার আগে তিনি প্রতিকার চেয়ে লিখিত আবেদন করেছেন দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে দুই দুই বার। ১২ জুন ২০১৭ ও ২২ মে ২০১৮ তারিখে। ২২ মে ২০১৮ তারিখের আবেদনপত্রে উল্লেখ আছে, ‘[…] ১২ জুন ২০১৭ ইং তারিখে একটি অভিযোগ করলে দোয়ারা থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে এক আসামিকে ধরে এনে আবার ছেড়ে দেয়। পরে বিষয়টি আপনার কার্যালয়ে সামাজিক একটি বৈঠকে একটি সাদা কাগজে উভয়পক্ষের স্বাক্ষর নিয়ে শেষ করা হয়।’ কিন্তু মেয়েটির বিপদ মোটেও কমেনি বরং প্রকারান্তরে বৃদ্ধি পায়। ২২ মে ২০১৮ তারিখের আবেদনে উল্লেখ আছে, ‘বিগত ২০ মে ২০১৮ ইং তারিখে বখাটেরা আ-কথা কু-কথায় আমাকে ঠ্যালা ধাক্কায় মারধর করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে বলেছে “তোর বাপাইন পুলিশরে আন দেখি তোরে কেডায় রক্ষা করে”।’ তা ছাড়া এ হেন বিপদের সময় ‘গ্রাম পঞ্চায়েতের লোকেরা শুনেও প্রতিকারে এগিয়ে আসেনি’ অসহায় মেয়েটির পাশে। এমতাবস্থায় অর্থাৎ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে আবেদনের পর আশা করি এই নির্যাতিত সাংবাদিককন্যা, যার স্বামী একজন প্রবাসী, যথাযথ প্রতিকার লাভ করবেন।