1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ০৭:০৭ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

মাদক ব্যবসাতে ঈদ জোয়ার

  • আপডেট সময় সোমবার, ৪ জুলাই, ২০১৬

মো. আমিনুল ইসলাম ::
মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর সন্নিকটে। শহর ছাড়াও উপজেলার বাজারগুলোর বিপণি বিতানে এখন ক্রেতা-বিক্রেতারা পার করছেন পোশাক ক্রয়-বিক্রয়ে ব্যস্ত সময়। ঈদের দিনকে কেন্দ্র করে অভিজাত খাবারের দোকানমালিকরাও নিচ্ছেন প্রস্তুতি। আর সবকিছুর সাথে তাল মিলিয়ে প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছে ‘অন্ধকার জগতে’র বাসিন্দারাও। মাদক কেনাবেচাই যাদের নেশা এবং পেশা। তাদের টার্গেট ঈদের রাত। প্রতি বছর ঈদের রাতকে কেন্দ্র করে বছরের সবচেয়ে বেশি কেনা-বেচায় মেতে ওঠেন মাদক ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা। ক্রেতাদের মধ্যে উঠতি বয়সীরাই বেশি সংখ্যক বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাদক কারবারি জানান, মাদক বিক্রি একটি লাভজনক ব্যবসা। এটাতে যারা জড়িয়ে পড়েন তারা সহজেই বেরিয়ে আসতে পারেন না। বিভিন্ন উৎসবে এ ব্যবসা হয়ে ওঠে আরও রমরমা। বিশেষ করে প্রতি ঈদে বিক্রি হয় বছরের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক দেশীয় ও ভারতীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ। ঝুঁকি থাকার পরও এবছর ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা মাদক মজুদে ব্যস্ত সময় পার করছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, কেবল ঈদুল ফিতরের রাতেই শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে সাপ্লাই হয়ে থাকে হাজার হাজার বোতল চোলাই ও ভারতীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ। এর মধ্যে রয়েছে ৫শ ও ২৫০ এমএল প্লাস্টিকের বোতলে ভরা দেশিয় চোলাই, ভারতীয় মদ অফিসার্স চয়েজ, এসি ব্ল্যাক, ম্যাগডুয়েলস, নাম্বার ওয়ান, ঈগল, ট্যাংগু, ভদকা, বিয়ারসহ অন্যান্য উচ্চমাত্রার অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়।
সূত্র জানায়, জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এলাকায় বিভিন্ন কৌশলে বিক্রি হচ্ছে মাদক। এর মধ্যে শহরের সবচেয়ে বড় ভারতীয় চালান আসে সাহেববাড়ি ঘাট এলাকায়। এরপরই দেশীয় মদের বড় মজুদ রয়েছে মধ্যবাজারে। এ দুই স্থান ছাড়া ময়নার পয়েন্ট, ওয়েজখালি, মাইজবাড়ি ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা থেকে সাপ্লাই হয় দেশিয় ও ভারতীয় মদের বিভিন্ন সাইজের বোতল।
সূত্র জানায়, এ বছর ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে মাদক ব্যবসায়ীরা আগে থেকেই মজুদ করেছেন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ। ঈদ ঘনিয়ে এলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা কয়েকগুন বেড়ে যাওয়ায় এ সময় মাদক পরিবহন করা সম্ভব হয় না। তাই আগে থেকেই রাতের আঁধারে মদের চালান সুবিধামত এলাকা দিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছানো হয়। পরে বস্তা বোঝাই করে খাল না হয় ডোবার পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়।
জানাগেছে, মাদকসেবীদের চাহিদার উপর ভিত্তি করে ঈদে দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুরের তিনটি রুট দিয়ে শহরে আনা হয় মদের চালান। এরমধ্যে মল্লিকপুরের আব্দুজ জহুর সেতু এলাকার বৈঠাখালি নৌকাঘাট হয়ে চালান আসে সবচেয়ে বেশি মদের। সেতুতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা থাকায় কৌশল অবলম্বন করে নৌকায় করে রাতের বেলা শহরে এসব মদ সাপ্লাই করা হয় বলে জানিয়েছে বিশ্বস্ত সূত্র।
সূত্র আরও জানায়, শহরের উঠতি বয়সী ছেলেরা সাহেববাড়ি ঘাট এলাকা থেকে মদ কালেকশন করে ভিন্ন পদ্ধতিতে। গত ঈদে তারা মোবাইলে ফোন করে অধিকাংশ বুকিং দিয়েছে। পরে মাদক ব্যবসায়ী তার নিজস্ব লোক দিয়ে মোটর সাইকেলে করে ক্রেতাদের কাছে মদ সাপ্লাই করেছেন। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না বলে সূত্রটি জানিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাদক ব্যবসায়ী জানান, ‘মদখোর যারারে কওয়া হয় তারা আর কত বোতল খায়? ওখন আগের দিন শেষ। স্মার্ট পুয়াইনতে ঈদের সময় আনন্দ ফুর্তির নামে মদ খাইয়া টাল ওই যায়। গত বছর ঈদে হাজার হাজার বোতল মদ বেচা-কিনা হইছে। এইবার আগে থাকিই ওয়েজখালি, মাইজবাড়ি, সাহেববাড়ি, ময়নার পয়েন্ট, মধ্যবাজারসহ আরো অনেক এলাকার ব্যবসায়ীরা মদ মজুদ করছে। ভদ্র মানুষ দেইখ্যা পুলিশে সন্দেহ না করাতে শহরের অনেকেই সহজে মদ বহন করতে পারে।’ তিনি বলেন, ২শ টেকা থাকি ১ হাজার টেকার মধ্যে ভালা ব্র্যান্ডের মদ পাওয়া যায়। সব সময় আবার পাওয়া যায় না। বিশেষ দিনের লাগি সীমান্ত এলাকা দিয়া এইগুলা আনা হয়। পরে ভালা লাভে বেচা হয়।’
শহরে ঈদুল ফিতরের রাতে মাদকের আড্ডা ঠেকাতে এবার হার্ডলাইনে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জেলা পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি’র পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
র‌্যাব-৯, সিপিসি-৩, সুনামগঞ্জ কোম্পানি কমান্ডার (ভারপ্রাপ্ত) এএসপি বেল্লাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের পেট্রোল টিমগুলো নিয়মিত শহরে টহল দিচ্ছে। যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার মোকাবেলা করতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। আমরা শহরে ও শহরের বাইরে ঈদের রাতে মাদকের আড্ডা যাতে না হয় এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে থাকবো।’
পুলিশ সুপার মো. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘ঈদে শহরের সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। বিশেষ করে শহরের তিন পয়েন্টে আমাদের চেকপোস্ট থাকবে। রিভারভিউ পয়েন্টে আমাদের ‘ফিক্সড পেট্রোল’ থাকবে। ঈদের রাতে কোন এলাকাতেই যেনো মাদকের আড্ডা না হয় সে ব্যাপারে পুলিশ হার্ডলাইনে থাকবে। সাদা পোশাকে আমাদের গোয়েন্দা সদস্যরা সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় দায়িত্ব পালন করবেন।’
সুনামগঞ্জ ২৮ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা সীমান্তে মাদকের চালান রোধে সর্বদা সতর্ক রয়েছি। আমাদের সদস্যরা নিয়মিত চোরাচালান রোধে অভিযান পরিচালনা করছেন। ঈদকে কেন্দ্র করে মাদকের চালানরোধে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। তাছাড়া সীমান্তবর্তী এলাকায় আমাদের কঠোর নজরদারি রয়েছে।’

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com