‘এক পরিবারের জন্য ২৭ লক্ষ টাকায় ব্রিজ!’ এটি ৩০ মে ২০১৮ তারিখে দৈনিক সুনামকণ্ঠে ছাপা হওয়া একটি সংবাদ প্রতিবেদনের শিরোনাম। একটি সেতু যে-কেউ তৈরি করতে পারেন। দেশে ব্যক্তিগত মালিকানায় সেতু নির্মাণে বোধ করি কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। যে-কেউ তাঁর ব্যক্তিমালিকানাধীন স্থানে ইচ্ছা মতো একটি সেতু নির্মাণ করতেই পারেন। তাতে কারও কোনও মাথা ব্যথার কারণ নেই। কিন্তু যখন সরকারি অর্থব্যয়ে নির্মিত কোনও সেতু সর্বসাধারণের ব্যবহারিক সুবিধা নিশ্চিত না করে কোনও বিশেষ ব্যক্তি বা তার পরিবারের ব্যবহারিক সুবিধাকে নিশ্চিত করে তখন বিষয়টি একটি বিশেষ মাত্রা পায় এবং কোনও ব্যক্তি বিশেষের সঙ্গে সেতু নির্মাণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সম্পৃক্ততার বিষয়টি জনসমক্ষে বিশেষভাবে দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে উঠে। তখন লোকালয়ে সেতুনির্মাণের রহস্য নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়-তোলপাড় হতেই পারে। পত্রিকায় লেখা হয়েছে, “[…] একটি পরিবারের লোকজনের যাতায়াত সুবিধার জন্য এ ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছে বলে এলাকার লোকজন মন্তব্য করেছেন। তারা অভিযোগ তুলেছেন, ব্রিজ নির্মাণের নামে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের কয়েক লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করাই ছিল এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য।’
এলাকার বিভিন্নস্থানে সেতু নির্মাণ করা দরকার। কোথাও শিক্ষার্থীরা, কোথাও সাধারণ মানুষ সেতুর অভাবে যাতায়াত সুবিধা থেকে বঞ্চিত আছেন। লোকজন অভিযোগ করেছেন, ‘অনেক গ্রাম, পাড়া, মহল্লা রয়েছে যেখানে একটি ব্রিজের জন্য দিনের পর দিন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন গ্রামবাসী।’ এমতাবস্থায় সাধারণ মানুষের প্রশ্ন এই যে, তাহলে সরকার কি আসলে সাধারণ মানুষের সরকার নয়? অন্তত আলোচ্য সেতুটি নির্মাণের মধ্য দিয়ে সাধারণের মনে এই ভাবনার উদ্রেক হতে পারে যে, সরকার সাধারণ মানুষের সরকার নয়। জানা কথা, সরকারি টাকা তো সাধারণ মানুষের টাকা। সরকার সাধারণ মানুষের সরকার হলে সেতু নির্মাণে ব্যক্তি বিশেষের স্বার্থ প্রাধান্য পায় কী করে, এই বিশেষ সেতুটি নির্মাণের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষের তা কোনও যুক্তিতেই বোধগম্য নয়।
বর্তমান সরকার জনবান্ধব সরকার। এই সরকার সা¤্রাজ্যবাদী চক্রান্ত প্রতিহত করে পদ্মাসেতু নির্মাণ করছে। দেশের সকল মানুষের যাতায়াত সুবিধা নিশ্চিতকরণ এই সরকারের লক্ষ্য। একটি পরিবারের যাতায়াত সুবিধা নিশ্চিতকরণে নির্মিত ছাতকের বিশেষ এই সেতুটি নিশ্চয়ই অনিয়ম-দুর্নীতির একটি ফসল, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এখানে সরকারি টাকার অপচয় করা হয়েছে কেবল নয়, জনগণের টাকায় কোনও ব্যক্তি বিশেষের সুবিধা নিশ্চিতকরণের অপরাধও সংঘটিত হয়েছে। যে-অপরাধটি প্রকারান্তরে শেখ হাসিনার জনবান্ধব সরকরের নীতিকে লঙ্ঘন এবং তাঁর সরকারের জনপ্রিয়তাকে ভূলুণ্ঠিত করার অপতৎপরতা চালানোর সঙ্গে সমান্তরাল ও সমার্থক। অচিরেই এই প্রবণতাকে প্রতিহত করা অবশ্যই জরুরি। জানা কথা, কোনও সরকার একটি বিশেষ পরিবারের সুবিধা নিশ্চিত করার সরকার হতে পারে না। সাধারণ মানুষের দাবি এই যে, যে বা যারা এই একটি পরিবারের জন্য একটি সেতু নির্মাণের দুর্নীতির সঙ্গে ও জনবান্ধব সরকারকে জনগণের কাছে অপ্রিয় করে তোলার অপপ্রয়াসের সঙ্গে জড়িত তাদের খোঁজে বের করে বিচারের সম্মুখীন করা হোক।