মো. শাহজাহান মিয়া / সাজ্জাদ হোসেন শাহ ::
জেলার বিভিন্ন উপজেলায় শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে ঈদবাজার। প্রবাসী অধ্যুষিত উপজেলা জগন্নাথপুরেও চলছে কেনাকাটার ধুম। অন্যান্য বছর ১৫ থেকে ২০ রমজানের মধ্যে ঈদ বাজার জমে উঠলেও এবার জমতে একটু দেরি হয়েছে। এর কারণ হিসেবে স্থানীয় লোকজন জানান, এবার আন্তর্জাতিক বাজারে ডলার ও পাউন্ডের দাম কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে প্রবাসী অধ্যুষিত উপজেলা জগন্নাথপুরে। প্রতি বছর ঈদ মৌসুমে প্রবাসী আত্মীয়-স্বজনের পাঠানো টাকায় উপজেলার অধিকাংশ পরিবারে ঈদ হয়। এবার প্রবাসীরা টাকা পাঠাতে দেরি করায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ডলার ও পাউন্ডের দাম কম থাকলেও প্রবাসীরা অনেকটা বাধ্য হয়ে দেশে থাকা তাদের আত্মীয়-স্বজনকে সাধ্য অনুযায়ী টাকা পাঠানোর কারণে অবশেষে ঈদ বাজার জমে উঠেছে। এছাড়া দেশে থাকা ধনাঢ্য পরিবারের লোকজন ইতোমধ্যে দেশের নামীদামি শপিংমলে কেনাকাটা করলেও মধ্যবিত্ত ও নি¤œ আয়ের লোকজন স্থানীয় বাজারে কেনাকাটা করছেন। তবে শেষ মুহূর্তে ঈদবাজার জমে উঠাতে সর্বত্র উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে।
রোববার জগন্নাথপুর সদর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারের প্রতিটি কাপড়ের দোকানে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। ক্রেতারা যারযার সাধ্যমতো কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পোষাকের দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতারা তাদের চাহিদা অনুযায়ী পোষাক কিনতে পারছেন না বলে ক্রেতাদের মধ্যে অনেকে জানিয়েছেন।
জগন্নাথপুরের অভিজাত বিপণি বিতান ফ্যামেলি শপ, বিন্দুজ, নিউ ঝলক ফ্যাশন, আসল ঝলক ফ্যাশন, রুপনগর, সালমান ফ্যাশনসহ প্রতিটি দোকানে ঈদ উপলক্ষে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। সেই সাথে অনেক দোকানে লটারি ড্র রয়েছে। এছাড়া উপজেলার প্রতিটি হাট-বাজারেও ঈদবাজার জমে উঠেছে। ফুটপাতের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় আরো বেশি লক্ষ করা গেছে। সেই সাথে পছন্দের জুতা কিনতে নামিদামি জুতার দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় দেখা যায়। এছাড়া কসমেটিক্সের দোকানেও তরুণীদের ভিড় দেখা গেছে। সবাই তাদের পছন্দের পণ্য কিনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
অভিজাত বিপণি বিতান ফ্যামেলি শপের মালিক আলী নুর রহমান জানান, অন্যান্য বছর আগে ঈদ বাজার জমলেও এবার জমতে একটু দেরি হয়েছে। তবে শেষ মুহূর্তে ঈদবাজার জমে উঠায় কেনাকাটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার ক্রেতাদের মধ্যে তরুণদের বেশি পছন্দ আইপিএল প্যান্ট, বাজরঙ্গি ভাইজান, পাঞ্জাবী, ফতোয়া, টিশার্ট ইত্যাদি। তরুণীদের পছন্দ ভারতীয় পণ্য সাহারা, দিলওয়ালে, সনমদে, বাজিরাও মাস্তানি ও লেহেঙ্গা। শিশুদের পছন্দ স্কার্ট, লেহেঙ্গা ইত্যাদি।
এদিকে, হাওরবেষ্টিত তাহিরপুর উপজেলার ছোট-বড় ২০টি হাটে শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে ঈদ বাজার। গতকাল রোববার উপজেলার অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র বাদাঘাট বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারের বিপণিবিতান থেকে শুরু করে জুতা, কসমেটিক্স, মুদি দোকানে ক্রেতাদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে বাদাঘাট বাজারই সবচেয়ে বড় ও আধুনিক, তাই ৭ ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক গ্রামের লোকজন এবাজারেই কেনাকাটা করেন যুগ যুগ ধরে। বাজারের তৈরি পোশাকের দোকান রয়েল ফ্যাশন প্লাস, বিল্লাল গার্মেন্টস, অঙ্গ শোভা ফ্যাশন, আলী গার্মেন্টসে ক্রেতাদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। এছাড়া বাজারে শাড়ি, লুঙ্গির দোকান শাহ্ বাদার্স, আজাদ বস্ত্রালয়, সোহাগ বস্ত্র বিতান, বধূয়া, শাড়ী ঘর, মোর্শেদ এন্ড বাদার্স, লাকী, নুর বস্ত্র বিতান, মিরানীয়া বস্ত্রালয়সহ সবগুলি শাড়ি, লুঙ্গির দোকানেও ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।
ক্রেতা খলিল মিয়া, হোসাইন আহমদ, আমির আলী, কাজী মিজানুর রহমান, খন্দকার শাহজাহান, সেন্টু মিয়া, রায়হান উদ্দিন রিপনের সাথে আলাপকালে তাঁরা বলেন, উপজেলার অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র এই বাদাঘাট বাজার যাতায়াতসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এ বাজারে তাই প্রতি বছর ঈদের কেনাকাটা এখান থেকেই করি। দাম তুলনামূলকভাবে অন্য বাজারের চেয়ে এখানে কমই আছে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, যদিও এ বছর হাওরের ফসল ডুবি হয়ে কৃষকরা দিশেহারা কিন্তু যাদুকাটা নদী ও এলসি স্টেশনগুলোতে কিছুটা কাজ কর্ম হওয়ায় শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা।