1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ০৯:৪৮ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

সিজার বাণিজ্য চিরতরে বন্ধ হোক

  • আপডেট সময় রবিবার, ২৭ মে, ২০১৮

বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত একটি সত্য এই যে, মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে রাষ্ট্রের কর্তব্য হল পাঁচটি অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া। সেগুলো হল : খাদ্য, বস্ত্র, আবাসন, শিক্ষা ও চিকিৎসা। কিন্তু একমাত্র সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ছাড়া কোনও পুঁজিতান্ত্রিক রাষ্ট্রই এগুলোকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। বাংলাদেশের সংবিধানে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রনীতির কথা লেখা থাকলেও এ দেশ চলে পুঁজিতন্ত্রের নিয়মে। এদিক থেকে বিবেচনায়, বাংলাদেশে চিকিৎসাব্যবস্থার বর্তমান বাস্তবতা মানুষের জন্য সুবিধা হয়ে উঠলেও সঙ্গত কারণেই অধিকার হয়ে উঠেনি। এ দেশে চিকিৎসাকে সাধারণ মানুষের জন্য এখনও অধিকারের পর্যায়ে টেনে নামানো যায়নি। দেশে সস্তা নয় তবে ব্যয়সাপেক্ষ পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা আছে বললে হয় তো অত্যোক্তি হবে না। সুনামগঞ্জ শহর বহরে ও জনসংখ্যায় একটি ছোট শহর। এখানে তিনটি সরকারি হাসপাতাল আছে। সরকারি হাসপাতালের সঙ্গে ২৫০ শয্যার সুবিধা যুক্ত হবে অচিরেই, আশা করা যায়। এমনকি এ জেলায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠারও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে। তাছাড়া এই শহরে আছে পাঁচটি ব্যক্তিমালিকানাধীন আধুনিক চিকিৎসাকেন্দ্র (ক্লিনিক)। এইসব বিবেচনায় বাস্তবে যথাযথ ও উন্নত চিকিৎসা আছে বলা গেলেও কিন্তু সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তির নিরিখে সামগ্রিক চিকিৎসাব্যবস্থাকে পর্যাপ্ত বলা যায় না। এর একটি বড় কারণ বোধ করি পণ্য হিসেবে চিকিৎসাসেবার দাম অধিকাংশ সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। বিশেষ করে প্রসবসেবা কিংবা প্রসূতিদের সন্তান প্রসবকরণের চিকিৎসাটিকে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নিয়ে রাখা হয়েছে কেবল নয়, বরং সেটাকে জটিল অজটিল নির্বিশেষে শল্যচিকিৎসার আওতায় একরকম বাধ্যতামূলক করে তোলে দামী পণ্যে পরিণত করা হয়েছে। যদিও চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিধিদ্বারা অনুমোদিত অবস্থা বিশেষে শল্যচিকিৎসকে প্রয়োগ করার কথা, কিন্তু সেটা করা হয় না।
বোঝাই যাচ্ছে, প্রকৃতপ্রস্তাবে চিকিৎসাসেবাকে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে হলে আরও অনেক কাঠখড় পুড়াতে হবে। কিন্তু চেষ্টা যে করা হচ্ছে না তা কিন্তু নয়। চেষ্টা হচ্ছে। গতকাল দৈনিক সুনামকণ্ঠে একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল, “স্বাভাবিক প্রসবসেবা জোরদারকরণ বিষয়ক কর্মশালা”। কর্মশালাটি জেলা শিল্পকলা একাডেমির হাসন রাজা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেটি ছিল ইউনিয়ন ও স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সার্বক্ষণিক স্বাভাবিক প্রসবসেবা জোরদারকরণ বিষয়ক অবহিতকরণ। সে জন্য আয়োজকদেরকে সাধুবাদ জানাই।
বাংলাদেশে চিকিৎসাব্যবস্থার সঙ্গে অতিরিক্ত টাকা উপার্জনের প্রবণতা এখনও প্রবলাকারে সর্বত্র বিদ্যমান আছে। এই প্রবণতাটি চিকিৎসাব্যবসায়ীদেরকে এতোটাই অমানবিক করে তোলে যে, কটা বাড়তি টাকা পাওয়ার আশায়, তারা তাদের চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসার্থে আসা প্রসূতির পেটকাটা (সিজার) ভিন্ন অন্য কোনও পথ খোলা রাখেন না। যে-সব প্রসূতি স্বাভাবিকভাবেই বাচ্চা প্রসব করতে পারবেন, তাদের পেটকেও কেটে বাচ্চা প্রসব করানো হয়। তার বিনিময়ে তারা মোটা অঙ্কের টাকা গুণেন এবং প্রকারান্তরে প্রসূতি মাকে চিরদিনের জন্য দুর্বল একটি মানুষে পরিণত করেন। তার স্বাস্থ্যগত অপূরণীয় ক্ষতি হয়। প্রকারান্তরে স্বাভাবিক জীবনে প্রয়োজনে ভারী ও কঠোর পরিশ্রমের কোনও কাজই তিনি আর করতে পারেন না। সারা জীবন তাকে সাবধানতার ও আতঙ্কের সঙ্গে জীবন কাটাতে হয়। মানবজন্মকে উপলক্ষ্য করে এই অমানবিক প্রবণতা চলতে পারে না। প্রসূতির প্রসবকালীন বিপন্নতাকে পুঁজি করে বাড়তি টাকা উপার্জনের এই নিষ্ঠুর কর্মপ্রকরণের বিরুদ্ধে পরিচালিত ‘স্বাভাবিক প্রসবসেবা জোরদারকরণ বিষয়ক অবহিতকরণ কর্মশালা’ দিনে দিনে আরও জোরদার করা হোক। প্রসূতির পেট কেটে মানবসন্তান প্রসবকরণের বাণিজ্য চিরতরে বন্ধ হোক। কোনও মা যেনো অকারণে, চিকিৎসাবিদ্যানুসারে যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া পেট কেটে সন্তান জন্মদানের শিকারে পরিণত না হোন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com