‘সুনামগঞ্জে এখনও কৃষকদের কাছ থেকে বোরোধান সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়নি।’ গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের শীর্ষসংবাদের শুরুটা করা হয়েছে এই সহজ সরল অমোঘ বাক্য দিয়ে এবং সুনামগঞ্জের কৃষকদেরকে হতাশায় নিমজ্জিত করে প্রকারান্তরে জানান দেওয়া হয়েছে, এবার বোরোধান সংগ্রহের কার্যক্রমটি দীর্ঘসূত্রিতার ফাঁকতালে পড়ে সম্পূর্ণ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। বিদগ্ধজনের অভিমত এই যে, কৃষকদের কাছ থেকে বোরোধান সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু না হওয়ার অর্থ একটাই। সেটা হল : ফড়িয়া ধান ব্যবসায়ীরা কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের সুযোগ লাভ করবে। এ জন্যই বোরোধান সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু করতে দেরি করা হচ্ছে, কেউ কেউ স্বাভাবিকভাবেই এমন বাঁকা ভাবনা ভাবছেন। কৃষকের হাতে যখন বিক্রি করার মতো ধান থাকবে না, তখন সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের কার্যক্রম এই যাকে বলে দেরি করে হলেও শুরু হবে এবং তখন ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা কৃষকদেরকে হটিয়ে দিয়ে সরকারের কাছে ধান বিক্রয় করার একচেটিয়া বাজার দখল করে বসে থাকবে। ধান সংগ্রহ শুরু করতে যত দিন দেরি হবে, ততো দিন ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা কৃষকের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কম দামে ধান ক্রয় করে রাখবে এবং সে-ধান সরকারি গুদামে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রয় করবে। এই ক্রয়-বিক্রয়ের ফাঁকে, অর্থাৎ কম দামে ক্রয় করে বেশি দামে বিক্রয় করায়, অনিবার্যভাবে মুনাফার সৃষ্টি হবে। এই মুনাফাটা ফড়িয়াদের পকেটস্থ করার কৌশল বাস্তবায়নের মূর্তনির্দিষ্ট প্রকাশ ঘটেছে ‘সুনামগঞ্জে এখনও কৃষকদের কাছ থেকে বোরোধান সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়নি।’ এই বাক্যটিতে। বিপরীত দিক থেকে বিবেচনা করলে সহজেই বোধগম্য হয় যে, এই বাক্যটির আর একটি নিহিতার্থ হল : কৃষকের ফসলের নির্ধারিত দাম থেকে একটি অংশ কেটে নিয়ে ফড়িয়াদের পকেটে তোলে দেওয়ার কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়ন। সময়মতো ধান ক্রয় শুরু করা হলে ফড়িয়ারা যে টাকাটা লাভ করার সুযোগ লাভ করে সে-টাকাটা কৃষকের হস্তগত হতে পারতো।
সে যা-ই হোক সংবাদে বলা হয়েছে, ‘চলতি সপ্তাহে বোরোধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করা হবে’। সরকারি ধান সংগ্রহের অভিযান এতোটাই পর্যুদস্ত হয়ে পড়েছে যে, এই ‘শুরু করা হবে’টাকে মন্দের ভালো বলে ধরে না নিয়ে আপাতত আর অন্য কোনও বিকল্প নেই। কারণ শুরুর সঙ্গে বরাদ্দ বৃদ্ধির বিষয়টি জড়িয়ে পড়েছে। বরাদ্দ না থাকলে তো ধান কেনা যাবে না। অর্থাৎ ধানসংগ্রহ শুরুর পরেও সংগ্রহ কার্যক্রমের সঙ্গে অনিবার্য বিলম্ব হওয়ার বিষয়টি জড়িয়ে পড়ছে। অবস্থাটা অনেকটা এরকম : পড়েছি মোগলের হাতে খানা খেতে হবে সাথে। অর্থাৎ এই দেরি কীছুটা হবেই। আর সরকারি কাজ তো দেরি না হয়ে হতেই পারে না। তারপরও মানুষ আশা করে বোরোধান সংগ্রহে বিলম্বে শুরু করা কার্যক্রমকে আর বিলম্বের ফাঁকতালে ফেলে তালগোল পাকানো হবে না এবং যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হবে।