প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। হলিউড ও বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী। বাংলাদেশে এসেছিলেন। ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে। উখিয়া ও টেকনাফের ১০টি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছেন। সেখানে হাজার হাজার শিক্ষাবঞ্চিত শিশুদের মানবেতর জীবন পর্যবেক্ষণ করেছেন। শরণার্থী শিশুদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এই সব শিশুরা পড়াশোনা করতে পারছে না। শিক্ষাবঞ্চনার পরবর্তী ধাপে এই শিশুরা একদিন চরমপন্থার দিকে ধাবিত হবে, সন্ত্রাসী হয়ে উঠবে, এই আশঙ্কা তাঁকে ভীষণভাবে বিচলিত করেছে। তিনি উপলব্ধি করেছেন, রোহিঙ্গারা বিপর্যয়ের মধ্যে আছে। কর্মক্ষম রোহিঙ্গারা কাজ পাচ্ছে না। এককথায় তিনি রোহিঙ্গাদের সঙ্কট বোঝার চেষ্টা করেছেন। এই বিপুল সংখ্যক (সরকারি হিসেবে এগারো লক্ষাধিক, বেসরকারি হিসেবে আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা।) রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে যে-ভাবে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে সেটা তাঁর কাছে ‘অভূতপূর্ব’ ও ‘বিশ্বের জন্য অনুসরণীয়’ বলে মনে হয়েছে। সফর শেষে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে বলেছেন, ‘কীভাবে মানবতার পাশে দাঁড়াতে হয়, বাংলাদেশের কাছে বিশ্বের সেটা শেখার আছে।’
রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া বিচলিত হয়েছেন, তা হবারই কথা। যে-কোনও বিবেকবান মানুষই বিচলিত হবেন। এটাই স্বাভাবিক। রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করে তিনি যখন উপলব্ধি করে শিক্ষাবঞ্চনার পরবর্তী ধাপে এই শিশুরা একদিন চরমপন্থার দিকে ধাবিত হবে অর্থাৎ সন্ত্রাসী হয়ে উঠবে, এবং ভয়ংকর এই আশঙ্কা তাঁকে ভীষণভাবে বিচলিত করে, তখন আমরাও বিচলিত না হয়ে পারি না। আমরা ভুলে যেতে পারি না যে, এই ভয়ংকর সন্ত্রাসের সরাসরি শিকার হবে বাংলাদেশ, যদি না অচিরেই তাদেরকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো না যায়। কারণ রোহিঙ্গারা এখন বাংলাদেশের ভেতরেই বাস করছে। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, ফেরত পাঠানো না গেলে অদূর ভবিষ্যতে এই শরণার্থী রোহিঙ্গারা এ অঞ্চলের রাজনীতির অস্থিরতার কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। এমনকি বাংলাদেশে ফিলিস্তিনি বিপর্যয়ের প্রাদুর্ভাব ঘটতে শুরু করলে অবাক হওয়ার কীছু নেই। এদিক থেকে বিবেচনায় ‘বাংলাদেশের কাছে বিশ্বের শেখার আছে’ কথাটি একটি অর্থহীন বাগাড়ম্বর মাত্র। রাষ্ট্রের পক্ষে এমন ক্ষতিকর শিক্ষাকে কেউ মেনে নেবে বলে মনে হয় না, এবং মেন নেওয়া সমীচীনও নয়।
কোনও একটি রাষ্ট্র প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ভেতরে তাঁর নাগরিকদের তাড়িয়ে দিয়ে শরণার্থী সমস্যা সৃষ্টি করে বিশ্বের সামনে অমানবিকতার ভয়ংকর দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে এবং বিপরীতে আর একটি রাষ্ট্র মানবিকতার পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে খাল কেটে কুমির নিয়ে আসবে এবং সেটাকে বিশ্ব বিবেকের পক্ষ থেকে প্রশংসা করাই কেবল নয়, ‘বিশ্বের জন্য অনুসরণীয়’ বলে ঘোষণা করা হবে, অথচ বাংলাদেশ ব্যতীত এমন শরণার্থী সঙ্কট রপ্তানির ঘটনা বিশ্বের আর কোথাও ঘটতে দেওয়া হবে না কোনওভাবেই, যে-কোনও মূল্যে। জানা কথা, অন্যায় সহ্য করার শিক্ষা কারও পক্ষে শিক্ষণীয় বিষয় হতে পারে না। তবে বিশ্বমনন ভালভাবেই এই কথাটা জানে যে, রোহিঙ্গা সঙ্কটের মতো কোনও সঙ্কট বাংলাদেশ ব্যতীত অন্য কোথাও মোকাবিলা করতে হবে না কখনও বিশ্বকে। সুতরাং রোহিঙ্গা সমস্যাকে ঘাড়ে নিয়ে চলাকে ‘বিশ্বের জন্য অনুসরণীয়’ বলতে কোনও বাধা নেই।