সুনামগঞ্জ দেশের একটি প্রত্যন্ত জেলা। এখানে সরকারি তরফ থেকে যে-সব উন্নয়নমূলক কাজকর্ম হয় সেগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখভাল করার সময় ও সুযোগ কোনওটাই উপর মহলের থাকে না। এই কারণে এখানে সরকারি কাজে বিভিন্ন ধরনের গাফিলতিসহ দুর্নীতি হয় হরহামেশাই। তাছাড়া স্থানীয় পর্যায়ের তদারককারীরাও সর্বসময় ও সর্বাবস্থায় তাদের দায়িত্বের প্রতি বিভিন্ন কারণে সনিষ্ঠ হতে পারেন না পুরোপুরি। ফলে প্রায়শ আমলাতান্ত্রিক জটিলতার সৃষ্টি হয়। যেমন ইদানিং যে-সব বাসায় ডিজিটাল বিদ্যুৎ মিটার বসানো হয়েছে সে-সব বাসায় পুরনো মিটার ও নতুন মিটার দু’টিরই বিল যাচ্ছে।
সুনামগঞ্জে একটি দুর্নীতির ঘটনা ঘটতে গিয়েও ঘটতে পারেনি। দৈনিক সুনামকণ্ঠে প্রকাশিত গতকালের এক সংবাদ থেকে জানা যায়, টাকা লোপাটের প্রস্তুতি বিষয়ক সংবাদ জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠ ও দৈনিক সুনামকণ্ঠে প্রকাশিত হওয়ায় সরকারের ২২ কোটি টাকা আত্মসাতের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে। পত্রিকা দাবি করেছিল, হাওরক্ষাবাঁধে এসকেভেটরে মাটি কেটে শ্রমিকের নামে মাস্টার রোল করে অতিরিক্ত ৪০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা চলছিল একটি শক্তিশালী চক্রের পক্ষ থেকে। শেষ পর্যন্ত সে চক্রান্ত ব্যর্থ হয়েছে। প্রশাসনিক সক্রিয়তার কল্যাণে সরকারি টাকা আত্মসাৎ প্রতিহত হয়েছে। যে যাই বলুন, এটা একটি প্রমাণ যে, প্রশাসন সক্রিয় হলে দুর্নীতি বন্ধ হয়। প্রশাসনকে ধন্যবাদ।
এমন আত্মসাতের ঘটনা কেবল দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘটে এমন নয়। কেন্দ্রে বোধ করি সরকারি টাকা লোপাটের এমন চক্রান্ত আরও প্রবলভাবে সক্রিয়। গতকালের প্রথম আলোর একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল, ‘শূন্য গ্যাসক্ষেত্র খুঁড়ে ২৩০ কোটি টাকা লুট’। চমৎকার সংবাদ। ঘটনাটি সহজ কথায় এমন : গ্যাস পাওয়া-যাবে-না-জেনেও কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলনের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে এবং ইতোমধ্যে ১২৯ কোটি টাকা সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে পরিশোধ করা হয়েছে, বাকি টাকা সংস্থাটি দাবি করছে। এদিকে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের একজন চাল কলের মালিক ৫০০ কেজির পাথরে কৌশলে ৩০০ গ্রাম বেশি ওজন যোগ করে বিগত এক যুগ ধরে ব্যবসা করে আসছেন। ঘটনাটি আরও চমৎকার। হাওররক্ষা বাঁধ, সমুদ্রে তেলক্ষেত্র খনন, চালকল ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রে অর্থাৎ দেশের সমগ্র আর্থব্যবস্থার প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতারণা, লুটপাট ইত্যাদি হাজার রকমের দুর্নীতি চলছে ব্যাপকাকারে। এভাবে চলতে পারে না। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে দেশ পাঁচ পাঁচ বার বিশ্বসেরা দুর্নীতিবাজ হয়েছিল। দেশের মানুষ সে-কথা ভুলে যায়নি। সে বদনাম ঘুচেছে শেখ হাসিনার আমলে। দেশের জনগণ দুর্নীতির দুষ্টচক্রের হাত থেকে রক্ষা পেতে চায় এবং গণবান্ধব এই সরকারের কাছে দুর্নীতি নির্মূলের প্রত্যাশা করে।