চারদিকে উন্নয়নের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে যখন তখন। সকলের মুখে উন্নতির উল্লম্ফনধর্মী উন্নয়নকথা চর্চিতচর্বিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। চমৎকৃত না হয়ে থাকা যাচ্ছে না। যদিও স্বাধীনতার পরবর্তী প্রতিটি সরকার স্বশাসনের সময় উন্নয়নের আওয়াজ দিয়েছে বড় গলায় এবং চূড়ান্ত বিচারে সে-উন্নয়নের অন্তসারশূন্যতা প্রমাণিত হয়েছে, বিশেষ করে ১৯৭৫-য়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ক্ষমতা গ্রহণের পরবর্তী সময়ের শাসনপর্বে, একাধিকবার দুর্নীতিতে বিশ্বসেরা দেশের শিরোপা অর্জনের মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধুকন্যার বর্তমান সরকারও স্বাভাবিকভাবেইে উন্নয়নের আওয়াজ দিচ্ছে। কিন্তু সে-আওয়াজ উন্নয়নের বাস্তবতার নিরিখে একবারে ফাঁকা যে নয় তার প্রমাণ মিলছে অহরহ। দেশ দুর্নীতিতে বিশ্বসেরা হয়ে যাচ্ছে না। দ্বিধাহীন চিত্তে বলা তো যায়, ‘উন্নয়নের অন্তসারশূন্যতা’র অপবাদ থেকে অন্তত দেশটা রক্ষা পেয়েছে। একের পর এক অবিরত পাঁচ পাঁচ বার কোনও দেশ বিশ্বে দুর্নীতির সূচকে প্রথম স্থান অধিকার করলে সে দেশের মানুষের ভাল লাগতে পারে না, আর সেটা যদি হয় জনগণের কোনও ত্রুটির জন্য নয়, সরকারের ত্রুটির জন্য। উন্নয়নের একটি প্রমাণ মাথা পিছু আয় বৃদ্ধি, সেটা যে আগের তুলনায় বেড়েছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তাছাড়া প্রবৃদ্ধির উন্নতি ধরে রাখা বা নামতে না দেওয়া উন্নতির আর একটা প্রমাণ। সেটা বাংলাদেশ পেরেছে এবং সেটা করেছে শেখ হাসিনার সরকার। যদিও অনেক অর্থনীতিবিদ বলেন, সে আয়বৃদ্ধিটা ঘটেছে ধনীদের ক্ষেত্রে, গরিবদের ক্ষেত্রে নয়। এই উন্নয়নের ঔজ্জ্বল্যকে সামনে রেখেই, সে-উন্নয়নকে জনগণের উন্নয়নে পর্যবসিত করার লক্ষ্যে, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ‘সরকারের উন্নয়ন কাজ ধরে রাখতে হলে নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও নির্বাচন করুন।’ উন্নয়ন জনজীবনের সুখশান্তির কিংবা খেয়েপরে বেঁচে থাকার একটি অপরিহার্য শর্ত। উন্নয়ন জনগণের ঘরের চৌকাঠে গিয়ে পৌঁছাক, সেটাই সাধারণ মানুষের কামনা।
আশায় বসতি। সুনামগঞ্জের মানুষও আশা করে ‘উন্নয়ন জনগণের ঘরের চৌকাঠে গিয়ে পৌঁছাক’ এবং পৌঁছে গিয়ে মানুষের দুঃখকষ্টকে দূর করুক। গতকালের সুনামকণ্ঠের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম বলেছেন, “চলতি বছর হাওর রক্ষা বাঁধের উন্নয়ন কার্যক্রম জবাবদিহিতার মাধ্যমে বাস্তবায়ন হয়েছে। এ ছাড়া ডিজিটাল পদ্ধতিতে বিল ছাড়করণসহ সকল কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয়েছে। হাওরাঞ্চলের উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে সরকার। এসব উন্নয়নকর্ম বাস্তবায়ন হলে সুনামগঞ্জ হবে সিঙ্গাপুরের মতো।” সুনামগঞ্জ কোন দেশের মতো হবে সেটা বড় কথা নয়। জেলা প্রশাসকের সদিচ্ছা ও সহমর্মিতার বিষয়ে সুনামগঞ্জ অবগত আছে। তাঁর আন্তরিক প্রচষ্টা সুনামগঞ্জের হাওররক্ষাবাঁধে অপ্রতিরোধ্য দুর্নীতিকে রুখে দিয়ে, হাওররক্ষাবাঁধ প্রকল্পকে সফলতায় পর্যবসিত করেছে। এবার তাঁর প্রচেষ্টা ‘হাওরাঞ্চলের উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন’ করে সুনামগঞ্জকে বিশ্বের দরবারে অনন্য ব্যতিক্রমী একটি উচ্চতায় অধিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে নিয়োজিত হবে এই প্রত্যাশা করে সুনামগঞ্জের সাধারণ মানুষ।