জেলার সব ক’টি বিস্তীর্ণ হাওরে সোনারঙা পাকা ধান এখন দ্যুতি ছড়াচ্ছে। হাওরের চারদিকে ধানের মৌ মৌ গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। এ সৌরভ ¯পর্শ করছে কৃষকের মনে। কিন্তু গত বছর চৈত্রের শেষ সময়ের দিনগুলো এমন ছিল না। সর্বনাশা বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল হাওররক্ষা বাঁধ ভেঙে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে সব পাকা ও আধাপাকা ধান। এর সঙ্গে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে কৃষকের স্বপ্ন। গেল বছর ধান হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছিলেন এ জেলার হাজার হাজার কৃষক। তারপরও হাওরের কৃষকরা ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। নতুন করে বুনেছেন স্বপ্নের জাল।
সুনামগঞ্জের বেশিরভাগ মানুষ কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। এ অঞ্চলের কৃষকের প্রধান উৎপাদিত ফসলই ধান। ইতোমধ্যে হাওরে হাওরে ধানকাটা শুরু হয়েছে। কিন্তু ধান কাটার এ ভরা মওসুমে দেখা দিয়েছে শ্রমিক সংকট। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক।
গত দুই দশক ধরেই পাকা ধান কাটার সময়ে শ্রমিকের অভাবে সেই ধান সময় মতো কাটতে না পারায় পাহাড়ি ঢল তলিয়ে নিয়ে নিঃস্ব করে কৃষকদের। এক সময় দেশের বিভিন্ন এলাকার ভাগালু (ধান কাটার শ্রমিক) ভাগে ধান কাটার জন্য ধান কাটার শুরুতেই এসে জড়ো হতেন। সেসব এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়নের কারণে তারা এখন হাওরের ঝুঁকিপূর্ণ বোরো ফসল কাটার জন্য আসতে আগ্রহী নন। ফলে শ্রমিকের অভাবে পাকা ধান ক্ষেতে পড়ে থাকে। এই সময়ে সুনামগঞ্জ জেলার বেশ কিছু বালু-পাথর মহাল এবং কয়লা ও চুনাপাথর কেন্দ্রিক শুল্কস্টেশনে এই অঞ্চলের শ্রমিকরা অধিক লাভের আশায় সেখানে কাজ করেন। যে কারণে হাওরের বোরো ধান শ্রমিকের অভাবে কাটতে না পারায় বৈরি প্রকৃতির রুদ্ররোষে পড়ে নষ্ট হয়ে যায়। এমতাবস্থায় কৃষকের শ্রমঘাম ও কষ্টের ফসল গোলায় তোলতে এবারও এক সীমাহীন অনিশ্চয়তা লক্ষ করা যাচ্ছে। এমন হয়ে থাকলে ফসলডুবির কারণে এই অঞ্চলের খাদ্য সরবরাহ ভেঙে পড়ার পাশাপাশি জাতীয় খাদ্য উৎপাদনও হুমকিতে পড়তে পারে। সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আগামী ১ বৈশাখ থেকে ২০ বৈশাখ পর্যন্ত সুনামগঞ্জ জেলার সবগুলো বালু-পাথর মহাল এবং শুল্কস্টেশন বন্ধ রেখে বিশাল শ্রমিক গোষ্ঠীকে হাওরে ধান কাটার জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। প্রকৃতপক্ষে হাওরের ফসল নির্বিঘেœ গোলায় তোলতে এর বিকল্প নেই। জেলা প্রশাসন এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নিবে – এটাই প্রত্যাশা।