গত কয়েক দশকে যে সামাজিক ব্যাধিটি ভয়াবহ আকারে বিস্তার লাভ করেছে তা হচ্ছে বখাটেপনা। স্কুলছাত্রী থেকে শুরু করে তরুণীদের রাস্তাঘাটে, এলাকায়, স্কুল-কলেজের সামনে পথ আগলে অশালীন অঙ্গভঙ্গিসহ নানাভাবে বখাটেরা উৎপাত করে আসছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বখাটেরা হয় এলাকার প্রভাবশালীদের সন্তান। এ কারণে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা তাদের বিরুদ্ধে নালিশ দেয়ার সাহস পায় না। তাই বাধ্য হয়ে স্কুল-কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিতে হয় অনেক ছাত্রীর। বাধা না পেয়ে কিংবা বিচার না হওয়ায় বখাটেদের উৎপাত বেড়ে চলেছে।
গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠে একটি উদ্বেগজনক খবর প্রকাশিত হয়েছে। যার শিরোনাম হয়েছে এমন- নারী ও তরুণীদের উত্ত্যক্তের ঘটনায় ৭ বখাটে গ্রেফতার। এ সংবাদে লেখা হয়েছে, রোববার সন্ধ্যায় সদর উপজেলার কাঠইর ইউনিয়নের উলুতুলু গ্রামের এক বাসিন্দা তার স্ত্রী, বোনসহ কয়েকজন সুনামগঞ্জ শহরের বাণিজ্য মেলা থেকে কেনাকাটা শেষে ব্যাটারিচালিত অটোরিকসাযোগে বাড়ি ফিরছিলেন। সদর উপজেলার কাঠইর এলাকা থেকে দেলোয়ারের নেতৃত্বে ৭ বখাটে আরেকটি অটোরিকসায় তাদের পিছু নিয়ে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করে ও কিছু দূর যাওয়ার পর প্রথমে অটোরিকসা থামিয়ে নারী ও স্কুল শিক্ষার্থীদের অশ্লীল ভাষায় উত্ত্যক্ত করে। পরে বাড়ির পথে তারা রওয়ানা দিলে বখাটেরা আবারও তাদের পিছু নিয়ে কিছু দূর যাবার পর অটোরিকসা থামিয়ে এক নারীর শরীরে হাত দেয় ও এক স্কুল পড়–য়া তরুণীদের ওড়না ধরে টানাটানি শুরু করে। এসময় অভিভাবক প্রতিবাদ করলে তাকে মারধর করে এবং বলে, বেশি কথা বললে তোর মাথা কেটে নিয়ে যাব, তোর সঙ্গে থাকা মহিলাদের… (লেখার অযোগ্য)। পরে স্থানীয় মানুষজন তাদের আটক করে পুলিশে দেয়।
ইভটিজিং বা যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কয়েক বছর আগে আইন পাস হয়েছে। এছাড়া নারীর সুরক্ষার জন্যও আইন রয়েছে। তবে বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা, উপযুক্ত আইনি সহায়তাদানের নিশ্চয়তা না পাওয়ায় অনেকে আইনের চৌকাঠ মাড়াতে চান না। বখাটেদের উৎপাতে প্রতিদিনই স্কুলগামী মেয়েদের বিব্রত হতে হচ্ছে। ছাত্রীরা শুধু নয়, কর্মজীবী নারীদেরও প্রায়ই বখাটেদের হয়রানির শিকার হতে হয়। এমন অবস্থা কিছুতেই চলতে দেয়া যায় না। আমরা আশা করি- বিচারের মাধ্যমে এইসব বখাটেদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেয়া হবে। যাতে অন্যরা তা দেখে এপথ থেকে সরে আসে। পাশাপাশি স্কুল-কলেজগামী ছাত্রীদের আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা দেয়ার ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো তৎপর হবে। সর্বোপরি বখাটেপনার বিরুদ্ধে জনগণকে সোচ্চার হতে হবে। এই সামাজিক ব্যাধিকে কঠোরভাবে প্রতিরোধ করতে হবে।